প্রিয় পাঠক, রমজানুল মুবারাক!সবাই কেমন আছেন? সবার রোজা কেমন যাচ্ছে?
আপনাদের রোজায় ফিটনেস ধরে রাখার জন্যে এবং রোজায় যেহেতু এতো কিছু পড়ার বা জানার সময় থাকে না, তাই ১০ টি সাধারণ ফিটনেস টিপস দিলাম।
প্রথমে রোজার কিছু খাবার খাওয়ার টিপস জানুন।
খাবার খাওয়ার টিপস :
১. সেহেরী খাওয়া বাদ দিবেন না : সেহেরিতে একেবারেই না খাওয়া ঠিক নয়, প্রথমত, সেহেরী খাওয়া সুন্নত| সেহেরী না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে| অনেকে মনে করেন, একবেলা, ইফতারে খেলে ওজন কমবে| কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হবে, শরীর দুর্বলতো হবেই, ওজন কমবে না, বরং বাড়বে|তাছাড়া সেহেরী না খেলে বিপকক্রিয়া পরিবর্তন হয়ে শরীরের সঞ্চিত শক্তি ক্ষয় হয়, ফলে দেহে ক্লান্তি আসে ও রোজা রাখতে অনেক কষ্ট হয়| কষ্ট হলেও সেহেরি খান| একটু পানি, ফল বা দুধ হলেও খান|
২. সেহেরীতে দুধ ও পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খান। কারণ পটাসিয়াম শরীরের পানি ধরে রাখে, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং দুর্বলতা কমায় । দুধ সারাদিনের পুষ্টি যোগায় এবং হজম হতে সময় লাগে বলে ক্ষুধা লাগে না । পটাশিয়াম যুক্ত খাবার হতে পারে: খেজুর, শাক, কলা ইত্যাদি ।
৩. অন্য সময়ের মতোই ক্যালোরি মেপে খাবার খাবেন।অন্য সময়ের মতই রমজানে বারে বারে অল্প করে পরিমিত পরিমানে খান|যেমন: ইফতার অল্প করুন, একটু পরে অল্প রাতের খাবার খান,সেহেরীতেও পরিমিত খান| ইফতার, রাতের খাবার ও সেহেরী এই তিন বেলাই খাবার খাবেন| কোনো বেলা খাবার খাওয়া বাদ দিবেন না| তাহলে দুর্বল হয়ে যেতে পারেন| রোজার মাসেও স্বাভাবিক সময়ের মতো ক্যালরি মেপে, পরিমিত পরিমানে খেতে হবে|যার যার শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী স্বাভাবিক নিয়মে ক্যালোরির চাহিদা অনুযায়ী খাবার খেতে হবে|
জেনে নিন ইফতারের খাবার গুলোর ক্যালরির মান|
৪.চিনি যুক্ত খাদ্য ও পানীয় খাবার খাবেন না । এগুলো আমাদের শরীরে দরকার নেই, চিনি যুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে| কারণ এটা খুব তাড়াতাড়ি রক্তে চিনির(ইনসুলিন) মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে সাময়িকভাবে ব্রেইনে শক্তি জোগালেও একটু পরেই তা স্তিমিত হয়ে যায় এবং শক্তিহীন মনে হয়|তাছাড়া চিনি একটি পরিশোধিত শর্করা, যা শরীরের বিভিন সমস্যা সৃষ্টি করে, যেমন:ওজন বাড়ায়| অনেক খাবার, যেমন: মিষ্টি, ফালুদা, জিলাপি, ইত্যাদি রোজায় খাওয়া হয়, কিন্তু এগুলো প্রচন্ড চিনিযুক্ত ও ক্যালোরীবহুল|এগুলো রোজায় প্রতিদিন খাবেন না| সপ্তাহে একদিন খেতে পারেন ।
৫. অন্য সময়ের মতো ২৫/২৫/৫০ নিয়ম পালন করুন। মানে আপনার খবর প্লেটের ২৫% শর্করা, ২৫% আমিষ, ৫০% সবজি থাকবে প্রতি বেলার প্রধান খাবারে ।
সারাদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন রকম পুষ্টিকর খাবার রাখুন সম্পর্কে জানুন|
৬. জাঙ্ক ফুড, অধিক ক্যালোরী বহুল, ভাজা পোড়া খাবার বাদ দিবেন। সবজি এবং ফল ও অধিক পুষ্টিকর খাবার খাবেন বেশি বেশি । শরীরের পুষ্টিবহুল খাবারের চাহিদা ও ক্লিন ভাবে খাবার খাবার দিকে নজর দিন। খাদ্য তালিকায় বেশি বেশি আঁশ যুক্ত খাবার রাখুন। কারণ রোজার মাসে সাধারণত সবাই হজমের সমস্যায় ভোগেন।
খাদ্যের ক্যালরি এবং আমাদের শরীরে প্রভাব সম্পর্কে জানুন|
এবার জানুন ব্যায়ামের কিছু সাধারণ নিয়ম :
ব্যায়ামের টিপস:
১. রমজানে নতুন কোনো ব্যায়াম শুরু করতে যাবেন না । কারণ নতুন ব্যায়াম করতে অনেক সময় ও মানসিক শক্তির দরকার, যা হয়তো রোজায় দেয়া সম্ভব না|
২. আপনার ফিটনেস অনুযায়ী ব্যায়াম করুন। যারা যেমন নিয়মে ব্যায়াম করতেন, তেমনি রাখুন কিন্তু সময় কমিয়ে দিন। যেমন: আপনি যদি সাধারণত: এক ঘন্টা অধিক পরিশ্রমের অথবা হাঁটার ব্যায়াম করেন, তাহলে তা কমিয়ে আনুন ৩০ মিনিটে । ওয়েট ট্রেইনিং যারা করেন, তারা রিপিটেশন কমিয়ে দিন, অথবা এক সেট কমিয়ে দিন। সপ্তাহে রোজ ব্যায়ামনা করতে পারলেও , একদিন পর পর করুন।
৩. কার্ডিও করতে না চাইলে যোগ ব্যায়াম বা ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করুন, যাতে পুরা শরীরের ব্যায়াম হয়। অথবা কার্ডিও অল্প করে বাকি সময় বডি টোনিং করুন।
রোজার ব্যায়াম কেমন হবে, তা জানতে ক্লিক করুন|
৪. ব্যায়াম কখন করবেন যদি চিন্তা করেন, তাহলে তার জন্যে ভালো সময় হতে পারে সেহেরীর আগে, ইফতারের অন্ততঃ একঘন্টা পরে, অথবা তারাবির নামাজ পড়ার পরে।
রোজার খাওয়া দাওয়া, নমুনা ইফতার এবং সেহেরি,রমজানে রোজা ভাঙ্গার স্বাস্থ্যসম্মত উপায় – জানুন|
অনেকে হয়তো মনে করছেন এতো কিছু ফিটনেসের নিয়ম কানুন মেনে চলা সম্ভব না, কারণ রোজা রেখে এতো কিছু নয়ন্ত্রন করা যায় না । কিন্তু এটা সঠিক নয়, কারণ আপনি চিন্তা করুন, আপনি কি আপনার ফিটনেস ধরে রাখবেন এবং একটু কষ্ট করে মেনে চলবেন? নাকি নিজেকে ছেড়ে দিয়ে ফিটনেস নষ্ট করবেন, যার ফলে আবার হয়তঃ নতুন করে সব কিছু শুরু করতে হতে পারে ।
মনে রাখবেন, রোজায় সুস্থ্য থাকতে পরিমিত খাওয়া, স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, কর্মচঞ্চল থাকা, আর নিয়মিত সঠিক ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়া দরকার| রোজার মাস হতে পারে আমাদের সংযমী হয়ে খাওয়া ও ইবাদত বন্দেগির মাস|
সবাইকে আল্লাহতালা সুন্দর ও সঠিকভাবে রোজা পালন করার তৌফিক দান করুন, আমীন|
এই পোস্টটি কেমন লাগলো তা জানাবেন, ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করুন ও পোস্টটির রেটিং দিন|
ফিটনেস বাংলাদেশের লেখা ভালো লাগলে, ইমেইলে নিয়মিত নতুন পোস্ট পেতে আপনার ইমেল ঠিকানাটি লিখে subscribe করুন|
Image Credit: Phoneworld