রমজান মাসে ফিট থাকুন : পর্ব ১: রোজার খাওয়া দাওয়া Ramadan Fitness Series:: Part 1: Diet During Ramadan

রমজান  মাসে আমরা সারাদিন রোজা রেখে নানান রকম ইফতার করি | বুট, পেয়াজু , বেগুনি , জিলাপি , হালিম, অনেক মুখরোচক খাবার থাকে আমাদের ইফতারের প্লেটে |  রোজার মাসে মনে হয় আমরা খবর প্রতিযোগিতা করি | কে কত খেতে বা রান্না করতে পারে |কিন্তু এই সব ভাজা পোড়া, গুরুপাক খাবার খেয়ে আমাদের কি হতে পারে? সারাদিন রোজা রেখে আমাদের পাকস্হলি খুব ক্ষুধার্ত ও দুর্বল থাকে | তারপর যদি এত রকম গুরুপাক খাবার একসাথে খাওয়া হয় তাহলে কি অবস্থা হবে? পেটের সমস্যা,মাথা ব্যাথা , কোষ্ঠকাঠিন্য , দুর্বলতা, অবসাদ , ulcers, acidity, হজমের  সমস্যা,ইত্যাদি হবে রোযার নিত্য সঙ্গী | অনেকের ওজন ও বেড়ে যায় |রোজার মাস সংযমের মাস | খাওয়া থেকে শুরু করে ব্যায়াম , জীবন যাত্রা সব ই হতে হবে নিয়ম মত , সাধারণ, এবং পরিমিত | অনেকে মনে করেন ইফতারে ভাজা পোড়া না থাকলে ইফতার ই হবে না | কিন্তু একটু চিন্তা করেন তো ভাজা পোড়া এত বেশি খেলে কি হবে ? খাবার আমাদের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ | এটি যদি ঠিক না থাকে তাহলে শারীরিক সমস্যা হতে বাধ্য |
রোজার আরেকটি উদ্দেশ্য হলো ফিট থাকা, রোগ থেকে দুরে থাকা | তাই খাবার ও হতে হবে নিয়ম মত | তাই এই  ডায়েট টিপস গুলো মেনে চললে শরীরটা কে অনেক চাঙ্গা মনে হবে |

কি ভাবে খাবার খাবেন?

ইফতার কি ভাবে খাবেন?
  • নিজেকে ইফতার এর সামনে সংযত করুন | আস্তে আস্তে খাওয়া শুরু করুন |
  • প্রথমে পানি বা শরবত খান | তারপর খোরমা বা খেজুর খান | তারপর কাচা ছোলা খেয়ে নামাজ পড়তে চলে যান |
  • তারপর আস্তে আস্তে বাকি খাবার খান |
  • পুরা পেট ভরে না খেয়ে একটু ক্ষুধা রেখে খেতে হবে |
  • তারপর আধা ঘন্টা পর পানি  খেতে হবে |
  • ইফতারের এক ঘন্টা পরে চা খেতে পারেন |

প্রতি  বেলার খাবার কি ভাবে খাবেন?

  • সেহেরিতেও পরিমিত পরিমানে খান
  • সেহরীতেও খুব বেশি খাওয়া বা সেহরী না খাওয়া ঠিক না | সেহরী না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে |
  • ইফতার, রাতের খাবার ও সেহেরী এই তিন বেলাই খাবার খাবেন|
  • কোনো বেলা খাবার খাওয়া বাদ দিবেন না| তাহলে দুর্বল হয়ে যেতে পারেন
  • রোজার মাসেও স্বাভাবিক সময়ের মতো ক্যালরি মেপে, পরিমিত পরিমানে খেতে হবে|
  • যার যার শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী স্বাভাবিক নিয়মে ক্যালোরির চাহিদা অনুযায়ী খাবার খেতে হবে
  • একবারে বেশি খাবার বা বেশি ক্যালোরিবহুল খাবার খাওয়া যাবে না, তাহলে ওজন বাড়তে পারে, পেটের সমস্যা,
    গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি হতে পারে
  • প্রতিবেলার খাবার হতে হবে সহজপাচ্য, পরিমিত ও যার যার শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী

কি খাবেন, কি খাবেন না

  • ইফতারে খেজুর বা খোরমা অবশ্যই খাবেন | এতে আছে শর্করা , চিনি , sodium, calcium, magnesium, phosphorus, iron, copper, sulfur, manganese, silicon , chlorine,ফাইবার , যা সারাদিন রোযা রাখার পরে খুব ই দরকারী |
  • চিনি যুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে | এটা খুব তাড়া তাড়ি রক্তে চিনি র মাত্র বাড়িয়ে দেয়, ওজন বাড়ায় | চিনি কে বলুন বাই বাই |
  • সব মাসের মত সবজি ও ফল খেতে হবে নিয়ম মত | তা না হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে নিত্য সঙ্গী |
  • এই গরমে অন্তত ৮ গ্লাস পানি না খেলে হজম এর সমস্যা হবে |ইফতারের পর থেকে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত পানি ,পানি আর পানি খাবেন একটু পর পর
  • ডাবের পানিও খেতে পারেন
  • সরবত খাওয়া ভালো, এতে পানিশুন্যতা হবে না| বিভিন্ন ফলের চিনি ছাড়া সরবত, লাচ্ছি, ইসবগুলের সরবত
    ইত্যাদি খেতে পারেন|
  • খাদ্য তালিকায় সব গ্রুপের খাবার থাকতে হবে : আমিষ, শর্করা , ফ্যাট,ভিটামিন, দুধ , দই ,মিনারেলস , ফাইবার ইত্যাদি  খেতে হবে নিয়ম মত |সুষম খাবার (balance diet) খেতে হবে |
  • অন্যান্য সময়ের মতই সাদা শর্করা কম খেয়ে লাল শর্করা বা complex carbohydrate (যেমন লাল আটা) বেশি খান
  • ফাইবার সম্দৃধ্য খাবার যেমন : লাল আটা , বাদাম ,বিনস, শস্য ,ছোলা, ডাল ইত্যাদি খেতে হবে | এগুলো হজম হয় আস্তে আস্তে তাই অনেক সময় পরে ক্ষুধা লাগে | রক্তে চিনির পরিমান তাড়া তাড়ি বাড়ে না |
  • সুষম খাবার : দুধ খেতে হবে প্রতিদিন |
  • ইফতারে কাঁচা ছোলা খাওয়া ভালো | তবে তেল দিয়ে ভুনা করে খাওয়া ঠিক না |
  • চা , কফি র মাত্রা কম হতে হবে | তা না হলে পানি শুন্যতা ,কোষ্ঠকাঠিন্য ,ঘুমের সমস্যা হতে পারে |
  • সেহরী তে দুধ সমদৃধ্য খাবার যেমন: oats, corn flakes ইত্যাদি খেলে আস্তে আস্তে হজম হয় | ক্ষুধা কম  লাগে |
  • ভাজা পোড়া, গুরুপাক খাবার : যেমন : ছোলা ভুনা, পেয়াজু, বেগুনি, চপ, হালিম, বিরিয়ানি বাদ দিবেন | তবে ঘরে তৈরী হালিম খেতে পারেন|
  • ওজন কমাতে চাইলে শর্করা কম খেতে হবে, আমিষ ও সবজিকে বন্ধু বানিয়ে পেট ভরাতে হবে |
  • প্রতিবেলা মাংস না খেয়ে অন্তত এক বেলা মাছ খেতে চেষ্টা করুন |
  • সহজ পাচ্য খাবার , ঠান্ডা খাবার যেমন : দৈ, চিড়া খাবেন | তাহলে সারাদিন রোজা রাখা নাজুক পাকস্থলী শান্তিতে খাবার হজম করতে  পারবে |
  • কোষ্ঠকাঠিন্যর দেশে যেতে না চাইলে ইসবগুল খেতে পারেন, দুধ বা জুস এর সাথে | এটা রাতে খেতে পারেন |
  • বেশি দুর্বল লাগলে ডাবের পানি বা saline খেতে পারেন  ইফতারের পরে |
  • কোমল পানীয় ?  এটা তো বিষ | ঘুমের সমস্যা ,acidity, ulsers, ইত্যাদি র কারণ | এটাও সারাজীবনের জন্য বাই বাই |
  • diebetis এর রোগীরা পরিমিত পরিমানে, ডাক্তার এর নির্দেশ মত খাবেন |

মনে রাখবেন রোজার মাসে junk food বাদ দিলে, balanced  diet খেলে দেহের অতিরিক্ত মেদ কমবে, toxin কমবে, ফিটনেস বাড়বে | সারাদিন না খাবার ফলে দেহের অতিরিক্ত মেদ কমে সারাদিনের কাজের মাধ্যমে | তারপর  balanced ইফতার আবার শরীরকে তৈরী করবে আগামী দিনের আরো একধাপ ফিটনেস বাড়ানোর জন্য |

রোজার মাসে সবার সুস্থ্য, সুন্দর জীবন কামনা করি |

যদি এই লেখা ভালো লাগে ,আপনার বন্ধুকে পাঠান এর লিঙ্ক |

আগামী প্রকাশনা : নমুনা ইফতার, সেহেরি এবং রোজার ব্যায়াম |

Image by: Nodame

4 responses to “রমজান মাসে ফিট থাকুন : পর্ব ১: রোজার খাওয়া দাওয়া Ramadan Fitness Series:: Part 1: Diet During Ramadan

  1. ভাল লাগল লেখাটা পড়ে। কিন্তু ম্যাডাম, আমার একটা সমস্যা হল আমি সেহরিতে এমনি যে কোন তরকারি দিয়ে ভাত খাই, তারপর দুধ, কলা দিয়ে ভাত খাই। দিনের বেলা মনে হয় পেটে গ্যাস হচ্ছে, আবার দেখা যায় পেট জ্বলে, ইফতারি খেতে বসলে একটু খাওয়ার পর পেট ভরা ভরা লাগে… এখন কি করনীয়? specific ভাবে বলবেন সেহরি আর ইফতারিতে কি কি খাওয়া ভাল?
    ধন্যবাদ

    • ধন্যবাদ ব্লগ পড়ার জন্যে|আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা অন্য কোনো পেটের সমস্যা আছে কিনা তা একটু ডাক্তার দেখিয়ে নিন|সেহেরিতে কলা দুধ খান সে জন্যে গ্যাস হতে পারে|কারণ কলায় কারো কারো গ্যাস হয়| তাছাড়া খাবারের সাথে ফল খেলে গ্যাস হতে পারে|ফল খাবেন খালি পেটে, যেমন ইফতার হজম হলে তারপর| ইফতারে কম খাওয়াই ভালো|একবারে কখনই বেশি খাবেন না|বারে বারে অল্প অল্প খান|তাহলে আর গ্যাসের সমস্যা হবে না| আর সেহেরী ও ইফতারের পরে প্রচুর পানি খান|ঠান্ডা খাবার: যেমন চিড়া দই, দুধ রুটি ইত্যাদি খেতে পারেন ইফতার বা সেহেরিতে|এছাড়া নরম সবজি খিচুড়ি খেতে পারেন| বেশি মশলা,তেল যুক্ত খাবার ও তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন|সেহেরী ও ইফতারে কি খেতে পারেন তা জানতে নমুনা ইফতার ও সেহরি লেখাটি পড়ুন |http://fitnessbd.com/2010/08/13/রমজান-মাসে-ফিট-থাকুন-নমুন/
      ধন্যবাদ,ভালো থাকবেন|

  2. খুবই সত্য কথা, পরামর্শগুলো আমাদের সবার মেনে চলা উচিত এই পবিত্র রমজানে। সুস্থ্য থাকার জন্য। আমার ব্লগে রমজানে সবার পছন্দের রেসিপি কি তা নিয়ে লিখতে গিয়ে আপনার এই ব্লগের লিঙ্ক পাই। খুবই ভাল একটা বিষয় নিয়ে এই ব্লগ। ভাল লাগল এই রকম একটা বাংলা ব্লগ দেখে।

    • অনেক ধন্যবাদ ব্লগ পড়ার জন্য | প্রশংসা করার জন্য | সবাইকে সঠিক নিয়মে স্বাস্থ্য সচেতন করা র জন্য ই আমার এই ব্লগ | দোয়া করবেন ব্লগ এর সফলতার জন্য |

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s