প্রিয় পাঠক, সবাইকে বসন্তের শুভেচ্ছা| অনেকেই ডায়েটিং করেন বা অনেকে খাবার বেছে খান, ব্যায়াম করেন, কিন্তু হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলেন না| কিন্তু, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জীবনযাপন না করলে, কোনদিনই আপনি সঠিক উপায়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ বা ওজন কমাতে পারবেন না| ফলে ফিটনেস অর্জনও সম্ভব হবে না| অর্থাত ফিট থাকার অন্যতম উপায় হচ্ছে হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলা|
আমি দেখেছি আজকাল অনেক বাঙালিরা বিশেষ করে তরুণ ও যুবকেরা এই হেলদি লাইফস্টাইল একেবারেই মেনে চলেন না| রাত জাগা এখন একটা ফ্যাশন, দেরী করে ঘুম থেকে উঠা, সকালের নাস্তা না করা, রাত ১১/১২ টায় রাতের খাবার খাওয়াতো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার|
আমার বাসার প্রতিদিনের নিয়ম রাত ৮টার পরে রাতের খাবার খাওয়া বন্ধ, রাত ১০-১১টায় সবাই বিছানায় যাবে| আমাদের অধিকাংশ অগ্রজরাই কিন্তু এই নিয়ম মেনে চলেন| তাই তাঁরা অনেক জ্ঞানী ও বিচক্ষণ|
যাই হোক, আমার ফেইসবুক ও টুইটারে জানতে চেয়েছিলাম কোন বিষয়ের উপর আগামী পোস্ট চান, পাঠকরা হেলদি লাইফস্টাইল কিভাবে মেনে চলবেন তা জানতে চেয়েছেন| হেলদি লাইফস্টাইল কি তা আগের পোস্টে বলা হয়েছে| এই পোস্টে সারাদিনের খাবারগুলো কখন ও কিভাবে খাবেন তা বলা হলো| এটি যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তা পড়লেই বুঝবেন|
সারাদিনের খাবারগুলো কখন ও কিভাবে খাবেন, তার কোনো ধরাবাধা নিয়ম না থাকলেও কিছু নিয়ম অবশ্যই আছে, যেমন: কোন খাদ্যে কত ক্যালরি? জেনে খাবার খাওয়া বা সারাদিনের খাবারে ক্যালরি মেপে খাওয়া , তিনবেলা খাবার খাওয়া ছাড়াও অন্যবেলা হালকা স্ন্যাকস খাওয়া বা দিনে ৫-৮ বার অল্প পরিমানে খাবার খাওয়া, একবারে বেশি খাবার না খাওয়া বা portion size control করা, একবারে সর্বোচ্চ ৫০০ ক্যালরি খাওয়া, বেশি সময় ধরে ক্ষুধা পেটে না থাকা, সব খাবার ও পানীয় তাড়াতাড়ি বা দিনের অগ্রভাগে খাওয়া, প্রচুর পানি পান করা ইত্যাদি| তবে দুইবেলা খাবারের মধ্যকার সময় ২-৫ ঘন্টার মাঝে হতে পারে বা ৫ ঘন্টার বেশি যেনো না হয়|এছাড়া দৈনিক ক্যালোরির চাহিদা অনুযায়ী খাবার খাওয়া বা ওজন বাড়ানোর বা কমানোর জন্যে দৈনিক ক্যালরি গ্রহনের হিসাবের উপর খাবার গ্রহণ করা|
সকালের নাস্তা: ঘুম থেকে উঠার ১/২ থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে
সকালের নাস্তাকে বলা হয় দিনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ খাবার| একটি প্রবাদ আছে–“সকালের নাস্তা খান রাজার হালে” | কারণ, সকালের নাস্তা পেটভরে ও ভালোমত খেলে সারাদিনের সব কাজে শক্তি পাওয়া যায়, ব্রেইন ঠিক মত কাজ করে, মেজাজ ও মন ভালো থাকে, মেটাবলিসমও বাড়ে বা ঠিক থাকে, রক্তের চিনির মাত্রা ঠিক থাকে, সারাদিন ক্ষুধা কম লাগে, ওজন ঠিক থাকে ও কমে| তাই কোনো ভাবেই সকালের নাস্তা বাদ দেয়া যাবেনা|
অনেক পুষ্টিবিদতো সকালের নাস্তায়, সারাদিনের ডায়েটিংএ চিটিংও করতে বলেন| মানে, সকালে যদি আপনি খুব অল্প পরিমানে আপনার প্রিয় খাবার, যেমন: একটুকরা হালুয়া, ছোট কাপ কেক, ছোট একটি মিষ্টি, একটু চকোলেট, একটুকরা পিঠা ইত্যাদি খান, তবে সারাদিনের খাবারে তৃপ্তি বজায় থাকবে| অন্য কোনো বাজে খাবার খেতে ইচ্ছা করবেনা| সকালের নাস্তায়, তাই বলে রোজ রোজ খুব ক্যালরিবহুল খাবার খাবেন না, আর এই ধরনের চিটার্স ডায়েট করলে, সেটাও বুঝে শুনে করতে হবে| সেক্ষেত্রে রোজ রোজ এই ধরনের খবর না খাওয়াই ভালো|
সকালের নাস্তায় খাবারের ব্যালান্স যাতে বজার থাকে, যেমন: জটিল শর্করা বা complex carbohydrate(লাল আটা, লাল চাল, ইত্যাদি) , সবজি বা ফল, আমিষ, ফ্যাট ইত্যাদি সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে| সকালে ফল খাওয়া ভালো, ফলের জুসও খাওয়া যায়| ওট, সিরিয়াল,বাদাম,রুটি, সবজি, ডিম ইত্যাদিও খেতে পারেন|
তবে ঘুম থেকে উঠার আধ থেকে একঘন্টার মধ্যে সকালের নাস্তা করা উচিত| সময়টা সকাল ৮টা অতিক্রম না করাই ভালো|সকালের খাবারটা জটিল শর্করা দিয়ে শুরু করা ভালো|
সকাল ১০/১১ টায়: হালকা নাস্তা
সকালের নাস্তার মোটামুটি দুই/তিন ঘন্টা পরে, অবশ্যই হালকা নাস্তা করতে হবে| নাহলে, আপনি দুপুরের খাবারে অতিরিক্ত ক্ষুধা অনুভব করবেন, ফলে অনেক বেশি খাবেন, আর তার ফল হবে ওজন বাড়া| এসময় খেতে পারেন একমুঠো বাদাম, একটুকরো ফল, সালাদ,সবজি ইত্যাদি|
দুপুরের খাবার: দুপুর ১-২ টার মাঝে
তবে দুপুরে খাবেন, রাজপুত্রের মতো|মানে দুপুরের খাবারটাও সকালের মতো ব্যালান্স করতে হবে, সব কিছু পরিমানমত –আমিষ, সবজি, সালাদ, শর্করা আর একটু দুগ্ধজাত খাবার, যেমন: আধা কাপ টক দই|
ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে খেতে পারেন লাল আটার রুটি বা ১/২-১ কাপ ভাত|লাল চালের ভাত হলে খুবই ভালো| মাংশ/মাছ হলে হাতের তালুর সমান, এক কাপ শাক, ১/২ কাপ সবজি, সালাদ ইত্যাদি|
বিকালের নাস্তা: বিকাল ৪ টায়
দুপুরের খাবারে পর থেকেই আপনার খাওয়া দাওয়া কমতে থাকবে, কারণ সন্ধ্যার পর সাধারনত আমরা কম কাজ করি, তখন খাবার বেশি খেলে অতিরিক্ত ক্যালরি শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমবে| আর তার ফল ওজন বাড়া| তবে বিকালের নাস্তা না করলে রাতের খাবারে বেশি খাওয়া হতে পারে, আর তার ফলও কিন্তু আরো খারাপ হবে|
বিকালের নাস্তায় এক টুকরো ফল, একটি/দুটো টোস্ট বিস্কিট বা ক্র্যাকার বিস্কিট, এক টুকরো কম ফ্যাট যুক্ত পনির, মুড়ি, সিদ্ধ সবজি, বাদাম, ফলের সালাদ, বা যেনো স্বাস্থ্যকর পানীয় ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে|
রাতের খাবার: রাত ৭-৮ টা
আপনি সারাদিন অনেক কষ্ট করেন, অনেক কাজ করেন, কিন্তু যদি তাড়াতাড়ি বিছানায় না যান, তাহলে সব কষ্টই বৃথা যাবে| তাই রাতের খাবার তাড়াতাড়ি শেষ করে, তাড়াতাড়ি বিছানায় গেলেই ঘুম যেমন ভালো হবে, তেমনি সুন্দর সকালটাও আপনাকে ভালো কাজের জন্য স্বাগত জানাবে| পরিনামে আপনি হবেন, অনেক সফল একজন মানুষ|
“রাতের খাবার খান ফকিরের মতো”|এটি আমার কথা নয়, একটি জনপ্রিয় প্রবাদ| খেয়ে শুয়ে পড়া তো যাবেই না| এই সংক্রান্ত আমার একটি পোস্ট আছে—রাতের খাবার অবশ্যই ঘুমানোর তিন ঘন্টা আগে শেষ করতে হবে|
রাতের খাবার হবে খুবই হালকা| রাতের খাবারে যতটা সম্ভব শর্করা এড়িয়ে চলতে পারলে ভালো|
কারণ সাদা শর্করা, যেমন: সাদা চালের ভাত বা সাদা আটার রুটি, মুড়ি ইত্যাদি ঘুমানোর ঠিক আগে খেলে রক্তে তাড়াতাড়ি ইনসুলিন বাড়িয়ে দেয়, এর ফলে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে| আবার জটিল শর্করা –হজম হতে অনেক সময় নেয়|তবে জটিল শর্করা খেলে ঘুমানোর ৩-৪ ঘন্টা আগে খাবেন |
তবে যে কোনো প্রকার শর্করা খেলে ঘুমানোর ৩-৪ ঘন্টা আগে খেলে ক্ষতি নেই|তবে তা পরিমানে কম হতে হবে|
রাতের খাবারেও দুপুরের মত ব্যালান্স করবেন, সব ধরনের খাবার রাখলেও খাবার হবে একেবারেই হালকা| মানে পরিমানে খুবই কম| রাতেও লাল/সাদা চালের ভাত, লাল রুটি, নুডুলস বা পাস্তা, মাছ, মুরগির মাংশ, সবজি, সালাদ, ফল ইত্যাদি খেতে পারেন |রাতের খাবারে ক্যালরি বহুল, তেল চর্বি, মশলা যুক্ত খাবার, গুরুপাক খাবার, চা কফি, মিষ্টি খাবার বাদ দিন|
ঘুমাতে যাবার আগে:
আপনি আগের সবই মেনে চলেছেন, এখন ঘুমাতে যাবার আগে ক্ষুধা অনুভব করছেন? ভাবছেন ক্ষুধা পেটে কিভাবে ঘুমাবেন? তাই আপনার এখন অবশ্যই এক গ্লাস ননীবিহীন/লো ফ্যাট দুধ পান করতে হবে| কারণ দুধ হচ্ছে একটি আদর্শ খাদ্য, এটি যেমন ভালো ঘুম এনে দিবে, তেমনি আপনি পাবেন সব রকমের প্রয়োজনীয় পুষ্টি| চাইলে লো ফ্যাট টক দই ও খেতে পারেন|
তবে এই সময় সকল খাবার/পানীয়তে চিনি বাদ দিবেন|এই সময় পানি পান না করাই ভালো, কারণ তাহলে হয়তো বারে বারে বাথরুমে যাবার কারণে, আপনার রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে|এক্ষেত্রে যদি দুধের সাথে হালকা কোনো স্ন্যাক্স খেতে চান(যেমন:এক মুঠো বাদাম, ক্র্যাকার বিস্কিট ইত্যাদি), তবে খাবার এক ঘন্টা পরে ঘুমান |
আরো কিছু খাওয়ার টিপস:
আগে থেকেই কোন বেলা কি খাবার খাবেন তা প্ল্যান করুন, মেনু তৈরী করুন|খুব বেশি পেট ভরে না খেয়ে, অল্প ক্ষুধা রেখে খান|
প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন খাবারের চাহিদা, বয়স, পরিশ্রম, ওজন, লাইফস্টাইল, শারীরিক সমস্যা ইত্যাদির কথা বিবেচনা করে দৈনন্দিন খাবারের মেনু নির্বাচন করতে হবে|সেক্ষেত্রে একজন ভালো পুষ্টিবিদের কাছে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই|
এইভাবেই যে সবার খাবার খাওয়ার নিয়ম মেনে চলতে হবে (খাবারের সময়) ও এই সব খাবারই যে খেতে হবে তা নয়, এগুলো শুধুই ধারণা|
তবে সকালের ও রাতের খাবার খেতে হবে যথা সম্ভব তাড়াতাড়ি|
অনেকেরই রাত করে বাসায় ফিরতে হয়, সেক্ষেত্রে তিনি হয়তো রাতের খাবার অফিসে খেয়ে বাসায় আসতে পারেন|অথবা বাসায় ফিরে হালকা খাবার খেতে পারেন|
বারে বারে অল্প পরিমানে স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ওজন ঠিক থাকে, রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক থাকে, মেটাবলিসম বা হজম শক্তি বাড়ে, ক্ষুধা কম লাগে , সারাদিন সব কাজে শক্তি পাওয়া যায় |
আর প্রতিদিন চেষ্টা করুন, একই সময়ে প্রতি বেলার খাবারগুলো খেতে|তা না হলে আপনি কাজ করার শক্তি পাবেন না, ব্রেইন ঠিক মতো কাজ করবে না|
সকালে উঠেই খালি পেটে, সকালের নাস্তা খাবার আগে বা চা পান করার আগে, এক/দুই গ্লাস পানি পান করুন| এটা হতে পারে লেবু মধু পানীয়| লেবু মধু পানীয় এক গ্লাস + সাধারণ পানি এক গ্লাস = দুই গ্লাস পানি এভাবে পান করতে পারেন|
সবশেষে একটা কথা বলব—“Early to bed and early to rise, makes a man healthy, wealthy and wise” | এইটা আমার অন্যতম প্রিয় প্রবাদ| আপনি আপনার ব্রেইনকে নষ্ট করতে না চাইলে এটি মেনে চলুন ও হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলুন| ©ftinessbd.com
সবাই ভালো ও সুস্থ্য থাকুন, হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলুন ও জীবনে অনেক জ্ঞানী ও বিচক্ষণ হোন, এই দোয়া করি|
এই পোস্টটি কেমন লাগলো তা জানাবেন, ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করুন ও পোস্টটির রেটিং দিন|
ফিটনেস বাংলাদেশের লেখা ভালো লাগলে, ইমেইলে নিয়মিত নতুন পোস্ট পেতে উপরে ডান দিকে আপনার ইমেল ঠিকানাটি লিখে subscribe করুন|
ফিটনেস বাংলাদেশের লাইক পেইজে লাইক দিন|
কিছু ভালো ডায়েট টিপস জানতে ক্লিক করুন
Image Credit: fanbox.com
very nice post
onek valo laglo
Thanks.
Nyc onek valo laglo post gula pore
Thanks. Bhalo lagle sheyar korun pls.
Helloooo fitness bd all my hearty grettings to u… “When should we eat” its a very usefull post today. with this could u plzz giv us protien and carb value of popular food list
Thank u….
অনেক দিন পর Healthy Tips পেয়ে খুব ভালো লাগলো। দরকারী Post.
ঢাকায় অফিস শেষে বাসায় আসতে ৭ – ৮ বেজে যায়। তারপরই Dinner? কিভাবে?
আমি সাধারণত ১০ টার পর রাতের খাবার খেয়ে ১১ টার দিকে ঘুমাতে যাই।
Healthy Lifestyle এ কি বেশী Problem হবে? অন্য কোন উপায় নাই?
ধন্যবাদ অনেক সুন্দর post দেয়ার জন্য।
ধন্যবাদ সুন্দর কমেন্ট করার জন্য| আপনি যথা সম্ভব চেষ্টা করুন, রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেতে বা দেরী করে খেলে হালকা খাবার খেতে| ভারী খবর খেলে তিন ঘন্টা পরে খেলে ভালো, হালকা খেলে এক/দুই ঘন্টা|এই পোস্ট ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করুন|
দারুন লাগল পোষ্টটা পড়ে।
অনেক ধন্যবাদ|পোস্টএর রেটিং দিন ও সবার সাথে শেয়ার করুন |