কোরবানী ঈদ মানেই খাওয়া আর খাওয়া| মাংসের হরেক রকমের পদের পাশাপাশি মিষ্টি খাবার, শীতের পিঠা ইত্যাদি থাকে আমাদের প্লেটে| বেশি খাবার সামনে থাকলে খেতে ইচ্ছা করবেই, আবার নিমন্ত্রণে গেলেও খাবার দেখে লোভ সংবরণ করাই দায়, আর বেশি চাপাচাপি করলে তো আরো খেতে হয়|
তাই আপনাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখুন, পরিমিত আহার করুন| বেশি খেয়ে ওজন বাড়াবেন না|
কিছু ঈদ উত্সবের স্বাস্থ্য টিপস আগেই দিয়েছিলাম| যেহেতু অনেক অনেক পাঠক এখন আমার ব্লগে, তাই আপনাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আপনাদের জন্য নতুন ভাবে ঈদ-উল-আজহার স্বাস্থ্য টিপস দিচ্ছি|
নিচের নিয়ম গুলো মেনে চললে ঈদ-উল-আজহার উত্সবে সুস্থ্য থাকা যাবে–
- খাবার দেখেই ঝাপিয়ে না পড়ে, আস্তে আস্তে খাওয়া শুরু করুন, নিজেকে সংযত করুন, পরিমিত আহার করুন|
- বেশি ক্ষুধা লাগিয়ে না খেয়ে অল্প ক্ষুধা লাগলে খান, এতে কম খাওয়া হবে, খাবার আগে পানি খেয়ে নিন, অথবা দাওয়াতে যাওয়ার আগে সালাদ,ফল ইত্যাদি কম ক্যালরির সহজ পাচ্য খাবার বা পানীয় খেয়ে নিন, তাহলেও কম খাওয়া হবে |
- কোরবানী ঈদে যেহেতু লাল মাংশ(গরু,খাসি) ছড়াছড়ি, তাই মাংশ খেতেই হয়, কিন্তু যখন খাবেন, তখন একবারে অল্প পরিমানে খান| কেননা লাল মাংশে অনেক ফ্যাট থাকে|
- কিন্তু তাই বলে কি এই ঈদে লাল মাংশ খাবেন না? মাংশ খাবেন খুবই পরিমিত পরিমানে|
- মাংশ যখন খাবেন তখন একবারে কতটুকু খাবেন? আপনার হাতের তালুর সমান মাংশ একবারে খেতে পারবেন|
- আর ভাত জাতীয় খাবার একবারে খাবেন এক থেকে আধা কাপ|
- উত্সবের রান্নার সময় তেল, ঘি, মাখন,ক্রিম,ডালডা ইত্যাদি কম ব্যবহার করুন| মাংশেই যে পরিমান সম্পৃক্ত চর্বি বা থাকে তা শরীরের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর|
- প্রতি বেলা মাংশ না খেয়ে একবেলা হলেও মাছ খান| যেমন: রাতের খাবারে মাছ রাখতে পারেন| কারণ মাছে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাট, যা শরীরের জন্য ভালো|
- কোনো দিন বেশি মাংশ খাওয়া হয়ে গেলে, তারপর দিন সবজি, সালাদ, ফল, ডাল খেয়ে ব্যালান্স করুন|
- মাংশ, পোলাও,বিরিয়ানি যখন খাবেন, তখন খাবারের সাথে প্রচুর সালাদ খাবেন| কারণ সালাদ খাবার হজমে সাহায্য করে|
- ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে কম ক্যালরি যুক্ত খাবার খেতে চেষ্টা করুন সবসময়| তাই মাথায় রাখুন বিরিয়ানি, পোলাউ, ভাত, তেলেভাজা, মিষ্টি খাবার, কোমল পানীয়তে প্রচুর ক্যালরি|
- প্রতিদিন নিয়ম করে ফল, সবজি, সালাদ,আর প্রচুর পানি খেতে ভুলবেন না |
- টক দই, বোরহানি, লেবুর শরবত (চিনি ছাড়া ) ইত্যাদি খাবার হজমে সহায়ক | এগুলো খাবার পরে খেতে পারেন|
- সকালে উঠেই লেবু আর মধু এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে গুলে খেলে তা হজমের জন্য এবং মেদ কমাতে সহায়ক|
- কাবাব,গ্রিল করা মাংশ খান| ভুনা, মশলাদার মাংশ বেশি খেলে স্বাস্থ্য ও পেটের সমস্যায় পড়তে হবে|
- মাংশের যে জায়গায় চর্বি কম, সেখানকার মাংশ খেতে পারেন, যেমন: রানের মাংশ|
- কোনো বেলা বেশি খেয়ে ফেললে বা দাওয়াত থাকলে অন্য বেলা রুটি,সালাদ, বা স্যুপ খেয়ে ব্যালান্স করুন |
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে শর্করা( ভাত, চিনি ) জাতীয় খাবার কম খেতে হবে |
- আর মিষ্টি খাবার দুই,একদিনের বেশি না খাওয়াই ভালো | খেলেও খুবই অল্প পরিমানে | সেক্ষেত্রে সেবেলা শর্করা জাতীয় অন্যান্য খাবার কম খাবেন অথবা খাবেন না|
- কোমল পানীয়, চিনি যুক্ত পানীয় না খাওয়াই ভালো | বদলে, ফলের চিনি ছাড়া জুস, বোরহানি, টক দই, পুদিনা লাচ্ছি, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে পারেন|
- মিষ্টি খাবার, গুরুপাক খাবার যেদিন খাবেন, সেদিন প্রচুর পানি খাবেন |
- প্রতিদিন portion control করতেই হবে, অন্তত পাঁচ থেকে আট বেলা পরিমিত আহার করুন, এটা ওজন কমানো এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক|
- সকালের নাস্তা, দুপুরের ও রাতের খাবারে শর্করা, সবজি, আমিষ রাখতে চেষ্টা করুন| প্রতিদিনের খাবারে সব খাবারের উপাদান যেমন: শর্করা,আমিষ, ভিটামিন, ফ্যাট,দুধ,মিনারেলস ইত্যাদি যেন থাকে তা নজর দিন| Balanced খাবার/diet মেনে চলুন|
- আর হাটাহাটি এবং ব্যায়াম করবেন সেদিন বেশি বেশি যেদিন বেশি খাওয়া হবে |
- ব্যায়ামের অভ্যাস থাকলে সেটা অব্যাহত রাখুন| কোনো ভাবেই বন্ধ করা যাবে না| উত্সবের ব্যায়াম কিভাবে করবেন? ক্লিক করুন
এছাড়া আরো অনেক উত্সবের খাওয়ার টিপস পেতে অবশ্যই ক্লিক করুন|
আরো অনেক ঈদ-উল-আজহার স্বাস্থ্য টিপস পাবেন এই লিঙ্কে |
উত্সবে একটু হলেও আপনার স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখুন | খাওয়া দাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি ব্যায়াম টাও চালিয়ে যান আগের মতই| নিজেকে বোঝান যে আপনি কিছুতেই ওজন বাড়াতে দেবেন না এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখবেন| চিন্তা করুন , বেশি খেয়ে ওজন বাড়াবেন, পেটের সমস্যা করবেন , নাকি সুস্থ্য থাকবেন ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন?
আপনার বন্ধু, আত্মীয়, স্বজন, এবং প্রিয়জনকে এই টিপস গুলো দিয়ে উপকার করুন |
আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে করুন, আর আমাকে জানান এই ব্লগ সম্পর্কে আপনার মতামত|
ফিটনেস বাংলাদেশের লেখা ভালো লাগলে, ইমেইলে নিয়মিত নতুন পোস্ট পেতে উপরে ডান দিকে আপনার ইমেল ঠিকানাটি লিখে subscribe করুন|
ভালো থাকবেন সবাই, আবারও ঈদের অনেক শুভেচ্ছা |
Image by: commentscod, recipedose
রাতে মাংস খাবার পর লেবুর রস খাওয়া ভাল।তাতে গরুর মাংসে যে ফ্যাট থাকে তা অনেকটা কেটে যায়।