Sleep:The Main Key Factor for Fitness ঘুম ও ফিটনেস : ঘুম ভালতো, সব ভালো

poor sleepআসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক| কেমন আছেন সবাই? অনেক দু:খিত, কারণ অনেকদিন পরে পোস্ট দিচ্ছি|

এইবারের পোস্টটি তাই একটু অন্য রকম দিলাম| এতদিন খাবার ও ব্যায়াম নিয়ে বেশি গুরত্ব দিয়েছি| এবার বিশ্রাম ও ঘুমের উপর, কারণ ঘুম ও বিশ্রাম যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না|

আমাদের স্বাস্থ্য ও শারীরিক শক্তি আল্লাহতায়ালার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। হাদীস শরীফে রাসূল (সাঃ) পাঁচটি মূল্যবান সম্পদ হারানোর পূর্বেই এগুলোর যত্ন নিতে বলেছেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ও ফিটনেস অন্যতম। পূর্ণাঙ্গভাবে বিশ্রাম না নিলে আমাদের দেহ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই, বার্ধক্য আসার পূর্বেই বার্ধক্যে পড়তে হয় এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। কারণ, আমাদের দেহ একটি ইঞ্জিন বা যন্ত্রের মতো। একটানা কোনো ইঞ্জিন চলতে থাকলে তা যেমন অকার্যকর হয়ে পড়ে, তেমনি মানবদেহ প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না পেলেও তা অকার্যকর হয়ে পড়ে।

আমরা সারাদিন কাজ করে, পড়ালেখা করে, ব্যায়াম করে, যদি সঠিক সময়ে ও পর্যাপ্ত পরিমানে না ঘুমাই, তাহলে শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস কখনই ঠিক থাকবে না|

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন:

“বিশ্রাম কাজের অঙ্গ এক সঙ্গে গাঁথা,
নয়নের অংশ যেন নয়নের পাতা।”

আজকাল তরুণ সমাজ সঠিক সময়ে ঘুমানো তো দুরের কথা, রাত জাগাটাকেই আদর্শ লাইফস্টাইল মনে করছে|প্রয়োজনেই হোক, আর অভ্যাসবশতই হোক, তা হেলদি লাইফস্টাইল নয়|

সেজন্যে পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের জীবনে কেন দরকারী তা দেয়া হলো:

  • ওজন নিয়ন্ত্রণ ও বাড়ার সাথে ঘুমের অনেক গভীর সম্পর্ক রয়েছে|বিভিন্ন গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে যে,যারা কম ঘুমায়, তাদের চাইতে যারা বেশি ঘুমায়, তাদের BMI indexes কম থাকে| কম ঘুমানোর সাথে ওজন বাড়ার এবং না কমার সম্পর্ক রয়েছে|আমাদের শরীরে Leptin and Ghrelin নামে দুটো হরমোন রয়েছে| Leptin তৈরী হয় ফ্যাট সেল থেকে এবং এর কাজ ক্ষুধা দমন করা আর Ghrelin তৈরী হয় পাকস্থলী থেকে, এর কাজ ক্ষুধা লাগানো| ঘুম কম হলে Ghrelin বেড়ে যায়, ফলে ক্ষুধা বেশি লাগে, বেশি খাওয়া হয়  ও ওজন বেড়ে যায়, আর ঘুম ঠিক মতো হলে Leptin বেড়ে যায়, ফলে ক্ষুধা কম লাগে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে| তাছাড়া  Pituitary gland থেকে growth hormones নামে যে হরমোন বের হয়, তা ঘুমন্ত অবস্থায় বেশি হয়| এই হরমোন মাসেল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, ফলে মেটাবলিসম বাড়ে|মেটাবলিসম বেশি হলে এনার্জি বেশি খরচ হয় ও ওজন দ্রুত কমে|তাছাড়া এই হরমোন calcium সংরক্ষণ করে, ফলে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে, ফ্যাট কমায়,ফ্যাট জমা হতে বাঁধা দেয়, অঙ্গ গুলোকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে, হজম শক্তি বাড়ায়| আরেকটি হরমোন Cortisol—যা স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত, তা ঘুম কম হলে বেশি নি:স্বরণ হয়, ফলে শরীরের প্রোটিন ভেঙ্গে গ্লুকোসে পরিণত হয়, বেশি গ্লুকোস, শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমা হয়| এই হরমোন মেটাবলিসম কমায়, মাসেল বাড়তে দেয় না|Cortisol যাতে না বাড়ে, সেজন্যে পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানো দরকার|
  • যারা ব্যায়াম করেন, তারা ব্যায়াম ঠিক মতো করতে পারবেন না, ঘুম ভালো না হলে| বিশেষ করে যারা বডি বিল্ডিং ও ওয়েট ট্রেনিং এর মতো ব্যায়াম করেন, তাদের জন্য একটি প্রবাদ খুবই সত্য:-“Rest and Repair”| ব্যায়াম করার ফলে আমাদের শরীরের মাসেলে যে ক্ষয় হয়, তা ঠিক করতে ও মাসেলের বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম দরকার| ঘুমালে মাসেলের রিপেয়ার হয়, কারণ তখন গ্রোথ হরমোন নি:স্বরণ হয়| পর্যাপ্ত ঘুম হলে মাসেল তৈরী হয়, এমনকি যখন আমরা ঘুমাই, তখন গ্রোথ হরমোন তৈরী হবার ফলে প্রোটিন তৈরী হয়, যদি আপনি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান | ঘুম ভালো না হলে আপনার ঠিক মতো ব্যায়ামই করতে ইচ্ছা হবে না, এভাবে দিনের পরদিন ঘুম ঠিক মতো না হলে হয়তো আপনি ব্যায়াম করাই ছেড়ে দিবেন|
  • আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও নির্ভর করে প্রতিদিনের ঘুমের পরিমান ও কোয়ালিটির উপর| শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি ঠিক না থাকে, তাহলে বিভিন্ন রোগ, যেমন: ঠান্ডা লাগা, জ্বর, গ্যাস্ট্রিক, বুক জ্বালাপোড়া ইত্যাদি আপনাকে কাবু করতে পারে|
  • দীর্ঘদিন ঘুমের কোয়ালিটি ও পরিমান পর্যাপ্ত না হলে শরীরে বিভিন্ন কঠিন রোগ বাসা বাধতে পারে| যেমন: হৃদরোগ হতে পারে, স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়| তাছাড়া ঘুমের অভাবে শরীরের ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে বেশি ক্ষুধা লাগে| কম ঘুম হলে ব্লাড প্রেসার ঠিক থাকে না, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর ঝুকি বেড়ে যায় ইত্যাদি|এমনকি ক্রনিক ইনসমনিয়ায় ক্যান্সারেরও ঝুঁকি বেড়ে যায়|
  • ঘুমের অভাবে শরীর দুর্বল লাগে| যারা শারীরিক পরিশ্রম বা খেলাধুলা করেন, তাদের জন্য ভালো ঘুম দরকার, কারণ ভালো ঘুম হলে শারীরিক শক্তিও পাওয়া যায়|ঘুম না হলে সারাদিন ক্লান্ত লাগে|
  • ঘুমের অভাবে হজম শক্তি কমে যায়, খাবার হজমে সমস্যা হয়, মেটাবলিসম কমে যায়, শর্করা হজম না হয়ে শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমা হয়|
  • ভালো ঘুম আমাদের কাজকর্মের মনোযোগ, কর্মক্ষমতা, মেমরি, পারফরম্যান্স, ব্রেইনের ক্ষমতা ইত্যাদি বাড়িয়ে দেয়।  গবেষণায় দেখা গেছে যে, কম ঘুম আমাদের ব্রেইনের ক্রিয়াকর্মের যে ক্ষতিসাধন করে, তা অ্যালকোহলের ক্ষতিসাধনের সমান।
  • যে কোনো সমস্যার সমাধানেও ঘুম ভালো হতে হবে, নাহলে ব্রেইন ঠিক মতো কাজ না করার ফলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন| যেমন: ছাত্র-ছাত্রী বা যারা চাকরি ও ব্যবসা করেন, তাদের ঘুম ভালো না হলে কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না| সেক্ষেত্রে যদি আপনার ঘুম ভালো না হয়, তাহলে সারাদিন কাজ ঠিক মতো করতে পারবেন না| ফলে, চিন্তা শক্তি, মনোযোগ, মেমরি, ব্রেইনের কর্মতৎপরতা, সমস্যা সমধান, সিদ্বান্ত নেয়ার ক্ষমতা ও সময়, পজিটিভিটি ইত্যাদিতে প্রভাব ফেলে|
  • ঘুম কম ও ঠিক মতো না হলে মেজাজ খিটখিটে থাকে, কাজে মনোযোগ দেয়া যায় না, কাজের মান ঠিক থাকে না| ২০০২ সালে National Sleep Foundation একটি জরিপ চালিয়ে বের করেছে যে: যাদের ঘুমের সমস্যা আছে, তাদের ২১% জীবনে অসুখী, ১২% সাধারনত রেগে থাকেন, ৫০% মানুষ অন্য মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন না, ৬০% কোনো কাজে ধৈর্য রাখতে পারেন না|কারণ, ঘুম এবং আমাদের মন মেজাজ একই ব্রেইনের কেমিক্যাল দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়|তাই ঘুম ভালো হলে তার শারীরিক শক্তি ও মন ঠিক থাকবে|
  • হাফিংটন পোস্টের আরিয়ানা হাফিংটন বলেছেন:-“ মানুষের ঘুমের মান ঠিক করে সে কেমন মানুষ”| ঘুমের অভাবে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়, ফলে এটা আমাদের মুডের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে|ফলে, মানুষ অল্পতেই রেগে যায়, মন খারাপ থাকে বা বিষন্নতায় ভোগে| যারা কম ঘুমান, তাদের ৯০% বিষণ্ণতায় ভোগেন। ইনসমনিয়া, স্লিপ এপনিয়া এ ধরনের স্লিপিং ডিসঅর্ডার গুলো মানুষকে বিষণ্ণতার রোগীতে পরিণত করে| কম ঘুম মন খারাপ বা বিষন্নতা ছাড়াও অন্যের সাথে ব্যবহারের ওপরও প্রভাব ফেলে| তাই ভালো ঘুম আপনাকে ভালো ও সুস্থ্য মনের মানুষ করতে সাহায্য করবে|
  • ঘুম ঠিকমতো না হলে আপনাকে দেখতেও প্রানবন্ত ও সজীব লাগবে না, আপনার চেহারাতেই ফুটে উঠবে আপনার ঘুমের অভাব| ঘুমের অভাবে মুখের চামড়া মলিন দেখাবে, মুখে ব্রণ, চোখের নিচে কালি, চুল পড়ার সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে|তাই রাতের ৮ ঘন্টা গভীর ঘুমকে অনেকে বলেন বিউটি স্লিপ|কারণ এই সময়ের বিশ্রাম আপনার পুরো শরীরের রিপেয়ার করে, ফলে গভীর ও পর্যাপ্ত ঘুম আপনাকে সুন্দর রাখে|

বিভিন্ন গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে, একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক অন্তত: ৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার| National sleep foundation একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৭-৯ ঘন্টা ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছে|

STREPchanges_1

আপনার কতটুকু ঘুম দরকার? ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন

 

আপনি যদি দীর্ঘজীবি ও সুস্থ্য মানুষ হতে চান, তাহলে আপনার লাইফস্টাইল ও কাজের মাত্রা অনেক প্রভাব ফেলে|তাই পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম হলো সুস্থ্য থাকা ও দীর্ঘ জীবনের রহস্য|

আমাদের শরীরকে এমনভাবে আল্লাহ তৈরী করেছেন যাতে আমরা রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারি, তারপর  ঘুম থেকে জেগে উঠে দিনে ঠিক মতো কাজ করতে পারি| আর আমরা যদি তা না করি, তাহলে আমরা আমাদের নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের দিকেই ঠেলে দিব|

তাই  প্রতিদিনের খাবার, ব্যায়াম, নিজের অন্যান্য যত্নের পাশাপাশি আপনার ঘুমের দিকেও নজর দিন| যারা ঘুম নিয়ে একটুও মনোযোগী নন, তারা ভালো মতো ঘুমিয়ে দেখুন সব কাজে কেমন আনন্দ লাগে, নিজেকে কেমন ঝরঝরে লাগে|

এই পোস্টটি কেমন লাগলো জানাবেন|ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করুন ও পোস্টটির রেটিং দিন|

ফিটনেস বাংলাদেশের ফেইসবুক লাইক পেইজে লাইক দিন|

ফিটনেস বাংলাদেশের লেখা ভালো লাগলে,  ইমেইলে নিয়মিত নতুন পোস্ট পেতে উপরে ডান দিকে আপনার ইমেল ঠিকানাটি  লিখে  subscribe করুন|

 

12 responses to “Sleep:The Main Key Factor for Fitness ঘুম ও ফিটনেস : ঘুম ভালতো, সব ভালো

  1. This is a great website. I’m currently visiting Dhaka from Toronto interested in exploring the health & fitness scene here. Glad someone is writing a blog with good content!

  2. This is a great website. I am from Toronto, currently visiting Bangladesh interested in exploring fitness & health scene here. Glad someone is writing a blog for Bangladesh with good content! Great job Kazi.

  3. though i am in surveillance activity mentioning at night … overall its a good post for all ages…

    lone survivor

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s