Some/Everyday Habits That Contribute to Weight Gain Part-1 ওজন বাড়ার জন্য দায়ী কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস: পর্ব-১

obese-overweight-348ag110510

প্রিয় পাঠক, সালাম ও শুভেচ্ছা|গরমে সবাই কেমন আছেন?প্রচন্ড ব্যাস্ত থাকায় অনেকদিন পরে পোস্ট লিখছি|নিয়মিত পোস্ট দিতে না পারার জন্য দু:খিত|

অনেকেরই হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া শুরু করে, বিশেষ করে ত্রিশ বছর বয়সের পরে, চাকরিতে ঢোকার পরে, ইত্যাদি| তখন ভেবে পান না, যে কেন হঠাৎ এত মোটা হয়ে যাচ্ছেন| এর অনেক কারণ আছে, যেমন: সঠিক খাদ্যাভাস, জীবন যাপন প্রণালী, কর্মতত্পরতার অভাব, খাবার সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব ইত্যাদি|

বিশ্বে যে হারে স্থুলতা রোগ বেড়ে যাচ্ছে, তা অত্যান্ত চিন্তার বিষয়| অতিরিক্ত ওজনের করনে যে সকল সমস্যা হতে পারে তা বলে শেষ করা যাবে না|

তাই স্বাস্থ্যসচেনতা বাড়াতে, ওজন বাড়ার কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস সম্পর্কে জানুন:

  •  আপনার খাদ্যের ভান্ডারে স্বাস্থ্যকর খাবার না রাখা অথবা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কোনটি, তা না জানা|আপনার ফ্রিজে ও খাবারের ভান্ডারে স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো, যেমন:কম ফ্যাটযুক্ত আমিষ, লাল চাল, লাল আটা,ফল, সবজি,বাদাম, লো ফ্যাট দুধ,পনির, দই, সালাদ ইত্যাদি রাখুন|যাদের মিষ্টি খাবারের প্রতি ঝোক, তারা চিনিছাড়া খাবার খেতে চিনির বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত পদার্থ দিয়ে তৈরী খাবার রাখুন|অথবা মিষ্টি ফল, ডার্ক চকলেট রাখুন|অনেকের প্রতিদিন মিষ্টি না খেলে হয় না, অনেক বাসাতেই প্রতিদিন মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার রান্না করা, কেনা বা খাওয়া হয়, এই স্বভাব বাদ দিতেই হবে|কারণ মিষ্টি খাবার শর্করা জাতীয়, অতিরিক্ত শর্করা ওজন বাড়ায়|
  •   স্বাস্থ্যসম্মত খাবার  কিভাবে রান্না করা যায় তা না জানা: স্বাস্থ্যকর খাবার কিভাবে রান্না করা যায়, যেমন: তেল ছাড়া রান্না, অল্প তেলে রান্না, গ্রিল,কাবাব করে রান্না ইত্যাদি সম্পর্কে জানাও দরকার|

কোন তেল ভালো(যেমন: জলপাই তেল,ক্যানোলা তেল), খারাপ ফ্যাট(ট্রান্স ফ্যাট, সম্পৃক্ত চর্বি:মাখন ইত্যাদি)খারাপ এগুলোও জানতে হবে|

  • পুষ্টিবিদের কাছ থেকে ডায়েট চার্ট না নেয়া বা উপদেশ না নেয়া: অনেকেই দেখা যায়, ব্যালান্সড ডায়েট করেন না বা ক্রাশ ডায়েট করেন, কিভাবে খাবার খেলে ওজন কমবে তা না জেনেই উল্টা পাল্টা ডায়েট করেন, এতে তাদের ওজন কমে না, কমলেও দুর্বল হয়ে যান,সঠিক পুষ্টির অভাবে শরীরে নানান সমস্যা দেখা দেয়|তাই ওজন কমানোর প্রথম ধাপ হবে একজন দক্ষ পুষ্টিবিদের কাছ থেকে তার বয়স,উচ্চতা, জীবন যাপন প্রণালী, শারীরিক  সমস্যা ইত্যাদি অনুযায়ী একটি পূর্ণাঙ্গ ডায়েট চার্ট বা খাদ্যের তালিকা নেয়া|
  • ফাস্ট ফুড বা বাইরের খাবারের দিকে ঝোক: আজকাল আমরা অনেক ব্যাস্ত, খাবার তৈরির সময় নেই,ঝটপট খাবার কিনে মজা করে গোগ্রাসে গিলে উদর পূর্তি করে বাসায় যেয়ে একটা লম্বা প্রশান্তির ঘুম দিলাম|ভাবলাম কি শান্তি! উদর পূর্তি হলো, আবার সময় ও কাজ বাঁচলো|কিন্তু এই ফস্ট ফুডে নেই কোনো পুষ্টি উপাদান, বা খাদ্য আঁশ|উপরন্তু আছে, saturated ও trans-fat, অনেক লবন, ক্যালরি, যা স্থুলতা রোগের কারণ|তাছাড়া এই সব খাবার যে পরিমান একবারে দেয়া হয়, তা এক পরিবেশন পরিমান নয়, তাই এগুলো খেলে একবারে অনেক খাবার খাওয়া হয়, যার ফলে ওজন বাড়ে|
  • সকালে নাস্তা না খাওয়া: সকালের নাস্তা না খাওয়া খুবই খারাপ অভ্যাস|মোটা হবার জন্যে এই একটি অভ্যাসই যথেষ্ট|কারণ, সকালের নাস্তা না খেলে মেটাবলিসম কমে যায়, দিনের পরের দিকে এত ক্ষুধা লাগে যে,তখন বেশি খাবার খাওয়া হয়ে যায়, ফলে ওজন বেড়ে যায়|সকালের নাস্তা খেলে হজম শক্তি বাড়ে, ব্রেইনের কাজের শক্তি পাওয়া যায়, সারাদিন কর্মচঞ্চল থাকার পাশাপাশি মন-মেজাজ ভালো থাকে|

সকালে উঠেই বেশি খেতে ইচ্ছা না করলে প্রথমে ফল দিয়ে হালকা নাস্তা খেতে পারেন|অথবা লেবু-মধু পানীয় পান করতে পারেন|তারপর আধা/একঘন্টা পরে ভালো মতো নাস্তা করবেন|তাছাড়া সকালের নাস্তায় জটিল শর্করা, যেমন:লাল আটার রুটি, ওটস, আমিষ হিসাবে ডিম,দুধ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে|

  • যে কোনো বেলার খাবার বাদ দেয়া: অনেকেই মনে করেন, কম খেলে ওজন কমে|কিন্তু এটা খুবই ভুল ধারণা|আবার অনেকে মনে করেন, কোনো বেলা খাবার না খেয়ে থাকবো, এতে কম খাওয়া হবে, তাই ওজনও কমবে|এর ফলে, মেটাবলিজম তো কমে যায়ই, পরের বেলা খাবার সময় এত ক্ষুধা লাগে যে, একবারে বেশি খাওয়া হওয়া যায়|ফলে হিতে বিপরীত হয়|

তাই ওজন কমাতে দিনে অন্ততঃ ৫বার খাবার খেতে হবে|সবচাইতে ভালো হলো: সারাদিনে দুই/তিন ঘন্টা পর পর ২০০/৩০০ ক্যালরি খাবার খাওয়া|

  •  খুব দ্রুত খাবার খাওয়া: আপনার যখন খুব ক্ষুধা লাগে, তখন হয়তো খুব বেশি খাবার দ্রুত গোগ্রাসে গিলে খেলেন, ভাবলেন কি শান্তি, কিন্তু আপনি কি জানেন আপনি আপনার শরীরের কি ক্ষতি করলেন? খাবার ভালো ভাবে ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেলে খাবার ঠিক মতো হজম তো হবেই, কমও খাওয়া হবে, ফলে ওজন কমবে|  আর আমাদের খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট পরে ব্রেইনে সংকেত পায় যে, আমাদের পেট ভর্তি, এখন আর ক্ষুধা নেই|
  •  যথেষ্ট পরিমানে পানি পান না করা: ওজন কমাতে সারাদিনে অনেক অনেক পানি পান করা বেশ বড় ভূমিকা পালন করে|পানি মেটাবলিজম বাড়ায়, খাবার হজমে সাহায্য করে, পানি পান করলে ক্ষুধা কম লাগে, ফলে ওজন কমে|খাবার খাওয়ার আগে পানি পান করলে কম খাওয়া হয়|ফলে ওজন কমে| তাছাড়া পানি পুরা শরীর, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, যেমন: ব্রেইন, ত্বক, নার্ভ, ইত্যাদি ভালো রাখে|
  • খাবার খাওয়ার ঠিক পরে পানি পান করা: খাবার খাওয়ার ঠিক পরে কখনই পানি পান করা উচিত নয়|কারণ পানি পাচক রসকে খাবার হজমে বাধা দেয়, ফলে ঠিক মতো খাবার হজম না হয়ে, শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমে ওজন বাড়ায়| খাবার খাওয়ার পরে পরে ঠান্ডা পানিও পান করাও ঠিক নয়, ঠিক একই কারণে|
  • আমিষ সঠিক পরিমানে না খাওয়া ও শর্করা বেশি খাওয়া: প্রতিবেলার খাবারে আমিষ পরিমিত পরিমানে থাকতে হবে| কারণ, আমিষ হজম করতে শরীরকে অনেক ক্যালরি পোড়াতে হয়|এটা শর্করা বা ফ্যাট এর চাইতেও বেশি|ফলে ফ্যাট বার্ন হয়| শর্করা বেশি খেলে সেটা শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমে, ওজন বাড়ায়| তাই প্রতিবেলার খাবারে লো ফ্যাট আমিষ, যেমন: মুরগির মাংশ, সামুদ্রিক মাছ, ডিম,পনির, বাদাম, টকদই ইত্যাদি রাখুন|
  • পরিমিত পরিমানে খাবার না খাওয়া: আমরা অনেকেই জানিনা কোন খাদ্যের এক পরিবেশন কত টুকু| পরিমিত পরিমানে খাবার খাওয়া কি তাও অনেকে জানেন না বা বোঝেন না|একবারে অনেক বেশি খাবার খেলে, তা শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমে, ওজন বাড়াবে|পরিমিত পরিমানে খাবার খেতে যা করতে হবে:
    • আমার প্লেইট এর নিয়ম মানতে হবে
    • কোন খাবার এক পরিবেশন কতটুকু জানতে হবে
    • প্রতিটি খাবার নির্দিষ্ট পরিমানে প্লেইটে একবারে নিয়ে খাবার খেতে হবে, আরেকবার কোনো খাবার নেয়া যাবে না| টেবিলে বড় পাত্রে খাবার নিয়ে খেতে বসা যাবে না|

উপরে উল্লেখিত কোনো খারাপ স্বাভাব যদি আপনার থেকে থাকে, তবে ওজন কমাতে অবশ্যই এগুলো পরিহার করুন|অন্যকেও পরামর্শ দিন|মনে রাখবেন–অভ্যাস মানুষের দাশ, মানুষ অভ্যাসের দাশ নয়| সুতরাং, চেষ্টা করলে আপনিও এই খারাপ স্বভাব বাদ দিয়ে ওজন কমাতে পারবেন| আমাদের দরকার শুধুই চেষ্টা করে যাওয়া ও ভুলগুলো বের করে শুধরানো| আশাকরি আপনারা তা পারবেন|

হেলদি জীবনযাপন, কি তা জানুন|

আগামী পর্বে থাকছে ওজন বাড়ার জন্য দায়ী আরো অনেক অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং সেগুলো দূর করার টিপস| তাই অপেক্ষায় থাকুন আগামী পর্ব পড়ার জন্যে|

এই পোস্টটি কেমন লাগলো তা জানাবেন, ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করুন ও পোস্টটির রেটিং দিন|

ফিটনেস বাংলাদেশের ফেইসবুক লাইক পেইজে লাইক দিন|

ফিটনেস বাংলাদেশের লেখা ভালো লাগলে,  ইমেইলে নিয়মিত নতুন পোস্ট পেতে উপরে ডান দিকে আপনার ইমেল ঠিকানাটি  লিখে subscribe করুন|

Image Credit: Zimbio

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s