Healthy Ways to Break a Fast During Ramadan রমজানে রোজা ভাঙ্গার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়

খেজুর, ফল ও পানীয় দিয়ে রোজা ভাঙ্গা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়

প্রিয় পাঠক, রমজানের শুভেচ্ছা|সবাই কেমন আছেন?রোজা কেমন চলছে? সবার শরীর স্বাস্থ্য কেমন আছে?

সারাদিন রোজা রেখে সবাই আমরা ইফতারের সময়ের অপেক্ষায় থাকি| ভাবি ইফতারের সময়ে পাগলের মতো খাবো|কত রকম মজার মজার খাবার থাকে ইফতারের আয়োজনে ! এই পাগলের মতো বা বেশি মাত্রায় খাওয়ার ফলে, রোজার যে আসল উদ্দেশ্য–সংযম, সেই সংযম কিন্তু এতে নষ্ট হয়ে যায়| সেই সাথে নষ্ট হয় আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়া |তাছাড়া একসাথে এতরকমের ও এত বেশি খাবার খাওয়ার ফলে, ওজনও বেড়ে যায়|

রমজানে আমাদের শরীরে অনেক রকম শারীরিক পরিবর্তন  আসে| অনেক সময় ধরে না খেয়ে থাকার ফলে  শরীরের  এনজাইম, যা হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী হয়,তা বন্ধ থাকে| তাই সেই হজম প্রক্রিয়া আবার শুরু করার সবচাইতে ভালো উপায় হচ্ছে- ধীরে সহজপাচ্য খাবার খেয়ে শুরু করা| তাছাড়া পাকস্থলীর ভিতরের মিউকাস আবরণও সংকুচিত অবস্থায় থাকে, ফলে যদি কোনো  ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত ঝাল মশলা যুক্ত, তৈলাক্ত, গরম, গুরুপাক খাবার হঠাত  করে পেটে পড়ে, তবে পেটে জ্বালা পোড়া করতে পারে| তাই শুরুতেই দরকার নরম, ঠান্ডা, সহজপাচ্য খাবার| অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকার ফলে, হজম প্রক্রিয়া শুরু হতে দেরী হয়, শরীরের খাবার শোষণ করতেও সময় লাগে, তাই ইফতারে যদি বেশি বেশি খাবার খান, তবে  বদহজম ,বমিভাব, পেটে ব্যথা, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি হতে পারে| রোজা রাখা অবস্থায় আমাদের শরীরে খাদ্যের অভাবে শরীর কোনো শক্তি উত্পন্ন করে না| তাই শরীরের শক্তির জন্যে মাসেল থেকে  শক্তি উত্পন্ন করে|পাকস্থলী ছোট হয়ে যায়, কারণ অনেকক্ষণ কোনো খাবার পায় না, তাই রোজা ভাঙ্গতে খাবার নির্বাচন করতে হবে বুঝে শুনে ,কারণ তখন শরীর খাবার হজম করতে সময় নেয়, বা তৈরী থাকে না, শরীরে খাবারের পুষ্টি শোষনেও সময় নেয় |

তাই ইফতারের খাওয়া বা রোজা ভাঙ্গার স্বাস্থ্যসম্মত উপায় কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে কিছু টিপস দিচ্ছি :

  • রোজা ভাঙ্গতে প্রথমে পানি/ফলের জুস খান|রোজা রাখার ফলে শরীরে, যে পানি শুন্যতা হয়, তার ফলে শরীরের রক্ত চাপ কমে যায়, ব্রেইনে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, তাই মাথা ঘোরা, কাজে মনোযোগের অভাব ইত্যাদি হয়| তাই প্রথমেই পানিশুন্যতা দূর করা দরকার|
  • তারপর খেজুর, ফল,ফলের জুস খান|খেজুর স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই উপকারী| কারণ, এতে আছে শর্করা , চিনি , sodium, calcium, magnesium, phosphorus, iron, copper, sulfur, manganese, silicon , chlorine,ফাইবার , যা সারাদিন রোযারাখার পরে খুবই দরকারী|আর খেজুর খেতেও খুব সুস্বাদু|
  • ফল বা ফলের জুস সহজপাচ্য| ফলে আছে অনেক ভিটামিন ও মিনারেলস, সারাদিন রোজা রেখে আমাদের শরীর এগুলোর জন্যে অপেক্ষ্যায় থাকে| তাছাড়া ফলে গ্লুকোস থাকে, যা সারাদিন রোজা রাখার পরে আমাদের শরীরে দরকার হয়| ফলে পানিও থাকে, তাই ফল শরীরে পানিরও চাহিদা মেটায়|
  • শুধু ফলের জুস না পান করে, ফলের সাথে সবজি মিশিয়েও ফল+সবজির জুস পান করতে পারেন
  • ফলের মধ্যে খেজুর, তরমুজ, পেঁপে, আপেল, আঙ্গুর,আম, পেয়ারা, নাশপাতি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে| নানা রকম ফল মিশিয়ে ফলের চাট/সালাদ বানিয়েও একসাথে খেতে পারেন
  • citrus বা লেবু জাতীয় খাবার দিয়ে রোজা ভাঙ্গলে, তা এসিডিটির কারণ হতে পারে|তাই লেবুর শরবত ইফতারের শুরুতে না পান করাই ভালো|
  • ফলের পরে সিদ্ধ সবজি, সবজির স্যুপ, সবজির জুস, সালাদ ইত্যাদি খেতে পারেন|সবজিও খুবই সহজ পাচ্য ও ও মিনারেলস সমৃধ্ব খাবার| সবজির সাথে কিছু শাক পাতা রাখলেও সেটা হজমে সহায়ক যেমন হবে, তেমনি শরীরে পুষ্টিও পাবে| যেমন: সবজির সাথে শাক, সালাদের সাথে লেটুস খেতে পারেন
  • আরেকটি খাবার ইফতারের শুরুতে খেতে পারেন, আর তা হলো: স্প্রাউট|তাছাড়া কাঁচা ছোলাও খাওয়া যেতে পারে| এগুলো সবজির সাথে বা সালাদের সাথে খেতে পারেন| স্প্রাউট হচ্ছে উদ্ভিন্ন বীজ, যাতে আছে চিনি, ভিটামিন,মিনারেলস, antioxidants, যা শরীরে সহজেই হজম ও শোষণ হয়|এতে chlorophyll ও আছে, যা শরীরের ভেতর পরিষ্কার রাখে|
  • কম চর্বি যুক্ত পনির বা টকদইও রাখতে পারেন ইফতারের প্লেটে|সেক্ষেত্রে টক দইয়ের লাচ্ছি, মাঠা, ইত্যাদি পান করা  যেতে পারে |সালাদের  ড্রেসিং  হিসাবেও  টক দই  ব্যবহার  করা যেতে পারে
  • পানি ,শরবত,ফল, সবজি ইত্যাদি খাবার পরে, অল্প শর্করা খাওয়া উচিত|
  • শর্করার ক্ষেত্রে যাতে কম GI (Glycemic Index), যা রক্তে গ্লুকোসের মাত্রা দ্রুত বাড়ায় না, তা খেতে হবে|সে ক্ষেত্রে জটিল শর্করা, যেমন: লাল আটা, লাল চাল, ইত্যাদি খাওয়া ভালো|কারণ, জটিল শর্করা, রক্তে দ্রুত ইনসুলিন বাড়ায় না, হজম হতে সময় নেয়, এগুলোতে আঁশও থাকে প্রচুর|মিষ্টি আলুও জটিল শর্করা তাই এটিও রাখতে পারেন ইফতারে|মিষ্টি আলুতে এই উপকারিতাগুলো ছাড়াও আছে প্রচুর beta-carotene, Vitamin C , ও potassium|©fitnessbd.com
  • প্রোটিনও দরকার ইফতারে, কারণ রোজা রাখলে খাবার ও আমিষের অভাবে, মাসেল ভাঙতে থাকে,তাই সেই ক্ষতি পূরণের জন্যে সহজপাচ্য আমিষ রাখতে পারেন, যেমন: ডিম|ডিমের বিকল্প প্রোটিন হতে পারে, ডাল, বিনস, টফু, মাছ, মুরগির মাংশ ইত্যাদি|
  • আরেকটি ভালো খাবার বাদাম|এটিও ইফতারের খাবারে রাখতে পারেন, যেমন: সালাদে, সবজিতে, ফলের চাটে ইত্যাদিতে|
  • যে খাবারই খান, তা যেনো সহজ পাচ্য হয়, শরীরে শক্তি ও পুষ্টি যোগায়|আর কোনো ভাবেই এক পরিবেশনের বেশি পরিমানে না হয়|অর্থাৎ প্রতিটি খাবার খেতে হবে পরিমিত পরিমানে|
  • আর সেই সাথে অনেক আঁশ সম্দৃধ্ব খাবারও রাখতে হবে ইফতারে|তাহলে আর হজমের সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না|  ©fitnessbd.com
  • খাবার  ধীরে ও ভালো ভাবে চিবিয়ে খান | ভালো ভাবে চিবিয়ে খেলে খাবার হজমে সহায়ক হয়, কারণ, চাবানোর ফলে ব্রেইন হজমে সহায়ক এনজাইম নি:স্বরণে সাহায্য করে|
  • পেট পুরা  ভর্তি   করে না   খেয়ে  একটু ক্ষুধা রেখে বা পেট ভরা শুরু করলেই খাওয়া বন্ধ করে দিন| কারণ আমাদের ব্রেইনে বা শরীরে ২০ মিনিট পরে পেট ভরা বোধ হয়|
  • অতিরিক্ত লবনাক্ত, চিনিযুক্ত পানীয় বা খাবারও যেনো না থাকে ইফতারের প্লেটে|
  • অতিরিক্ত তেল, তেলে ভাজা, গুরুপাক খাবার ইত্যাদি ইফতারে খাওয়া ঠিক নয়| এগুলো হজমে সমস্যা হয়, অতিরিক্ত ক্যালরি বহুলও|
  • চা,কফি দিয়েও ইফতার ভাঙবেন না|
  • সারাদিন রোজা রেখে আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, তাই রোজা ভাঙ্গতে যদি ভাজা পোড়া বা গুরুপাক খাবার খান, তবে বদহজম, পেটের সমস্যা, মাথাঘোরা, বমিভাব ইত্যাদি হতে পারে| গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীদের তো এই বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে|খেতে হবে সহজপাচ্য ও পরিমিত খাবার|মনে  রাখবেন  অতিরিক্ত  খাওয়া বা গুরুপাক  খাবার খাওয়া মানে আপনি আপনার শরীরের ওপর অত্যাচার করছেন

সারাদিন রোজা রেখে আমাদের চামড়া বিবর্ণ হয়ে যায় বা কুচকে যায়, তাই বেশি বেশি পানি, ফল, সবজি খেলে এই সমস্যাও দূর করা যায়|

রোজার খাওয়া দাওয়া, নমুনা ইফতার এবং সেহেরি, রোজার ব্যায়াম, ইফতারের খাবার গুলোর ক্যালরি মান–এই পোস্টগুলোও রোজায় আপনাদের অনেক উপকারে আসবে|

মনে রাখবেন, রোজায় সুস্থ্য থাকতে পরিমিত খাওয়া, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ, কর্মচঞ্চল থাকা, আর নিয়মিত ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়া দরকার| রোজার মাস হতে পারে আমাদের সংযমী হয়ে খাওয়া ও ডায়েট করার একটি শিক্ষার মাস|

রোজায় সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি|

এই পোস্টটি কেমন লাগলো তা জানাবেন, ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করুন ও পোস্টটির রেটিং দিন|

ফিটনেস বাংলাদেশের লেখা ভালো লাগলে, ইমেইলে নিয়মিত নতুন পোস্ট পেতে উপরে ডান দিকে আপনার ইমেল ঠিকানাটি লিখে subscribe করুন|

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s