ব্যায়াম শুরুর আগে কিভাবে ওয়ার্ম আপ করবেন?

Dynamic Stretching–walking lunge

প্রিয় পাঠক, গত ১৫ই মার্চ,২০১২, নিউ এইজ পত্রিকায় আমার একটি লেখা—“ Warm Up Before Exerciseছাপা হয়েছিল|অনেক পাঠক অনুরোধ করেছেন ওই লেখাটি যেনো বাংলায় অনুবাদ করে দেই|তাই আপনাদের জন্যে বাংলায় অনুবাদ করে লেখাটি পুনরায় আমার ব্লগে ছাপা হলো|

ব্যায়াম শুরুর আগে কিভাবে ওয়ার্ম আপ করবেন?

ব্যায়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ– ওয়ার্ম আপ| ওয়ার্ম আপ এর মাধ্যমে শরীর ও মন দুটোকেই ব্যায়ামের জন্যে তৈরী করা হয়|এর মাধ্যমে ব্যায়ামের ফলে ইনজুরি, মাসেল পুল, হার্ট এটাক ইত্যাদির হাত থেকে দূরে থাকা যায়|অন্যান্য সুবিধাগুলোর মধ্যে আছে—শরীরে ধীরে ধীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানো, শক্তি বাড়ানো, হার্ট রেট বাড়ানো,শ্বাস প্রশ্বাস বাড়ানো, শরীরের ও মাসেলের তাপমাত্রা বাড়ানো, সর্বপরি শরীরে হঠাত কোনো চাপ না দেয়া|মাসলের তাপমাত্রা বাড়লে, মাসেল ঢিলা ও স্থিতিস্থাপক হবে, ফলে মাসেলে অক্সিজেন ও রক্ত সরবরাহ বাড়বে, যা মাসেলে পুষ্টি সরবরাহ করে|তাছাড়া মাসেলের কাজ করার গতিও বাড়ে ওয়ার্ম আপ করার ফলে|

অনেকেই ব্যায়াম শুরুর আগে ওয়ার্ম আপ করেন না|কিন্তু এটি শরীরে জন্যে খুবই  ক্ষতিকর বা বিপদজনক|

মনে রাখবেন, আপনি যদি ঠিকমতো ওয়ার্ম আপ না করে ব্যায়াম করেন,তবে আপনার শরীরে ব্যায়াম ঠিক মতো কাজ তো করবেই না, উপরন্তু আপনার শরীরে ক্ষতি হতে পারে|অনেকেই ওয়ার্ম আপ না করেই, পেটের ব্যয়াম করেন, ওয়েট ট্রেইনিং করেন, এরোবিকস করেন, এমনকি দৌড়ান, এতে কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায় না, বরং শরীরের ক্ষতি হতে পারে|

ওয়ার্ম আপ করার কিছু টিপস :

ওয়ার্ম আপ করা মানে শরীরের কাজ করার/ব্যায়ামের গতিকে ও হার্ট রেট ধীরে ধীরে বাড়ানো|এজন্যে বিভিন্ন রকমের ব্যায়ামের মাধ্যমেই ওয়ার্ম আপ করা হয়, যেমন- কার্ডিও, dynamic স্ট্রেচিং ইত্যাদি|

  • প্রতিটি ব্যায়ামের ওয়ার্ম আপ এর নিয়ম আলাদা হতে পারে, যাতে করে যে যে মাসেলে কাজ করা হবে, সে সে মাসলের ওয়ার্ম আপ ঠিক মতো হয়| তাই যখন যে ব্যায়াম করবেন, সেই ব্যায়ামের কি ওয়ার্ম আপ হবে তা আগেই জানা দরকার
  • ওয়ার্ম আপ ব্যায়াম হবে ধীর গতির ও সহজ ব্যায়াম এবং ব্যায়ামের ক্ষেত্রে আপনার তীব্রতাও কম হবে|
  • ওয়ার্ম আপ ব্যায়াম এর তীব্রতা কত হবে তা নির্ভর করে একজন ব্যক্তির শারীরিক ফিটনেস ও কোন ধরনের ব্যায়াম করা হবে,তার উপর|
  • অনেক ধরনের ওয়ার্ম আপ ব্যায়াম আছে, যেমন: ধীরে হাঁটা, dynamic স্ট্রেচিং, ধীরে সাতার কাটা, স্থির সাইকেল চালনা, ধীরে, সহজ এরোবিকস করা,ধীরে জগিং করা ইত্যাদি|
  • ওয়ার্ম আপ এর জন্যে, কমপক্ষে ৫ মিনিট যেকোনো প্রকার ব্যায়াম করতে পারেন(যেমন: ধীরে হাঁটা, জগিং করা,মার্চ করা,লাফানো ইত্যাদি)| তারপর ৫ মিনিট স্ট্যাটিক স্ট্রেচিং করতে পারেন,মাসেল গুলোকে কাজ করানোর জন্যে| যদিও স্ট্রেচিং ওয়ার্ম আপ ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্ত নয়|
  • কমপক্ষে ১০ মিনিট ওয়ার্ম আপ করলে ভালো|কারণ, ১০ মিনিট পরে আপনার মাসেলে ব্যায়াম কাজ করা শুরু করবে, আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়বে, আপনি ক্যালরি বার্ন করা শুরু করবেন, এবং আপনার শরীরের ওজন কমা শুরু করবে|
  • ওয়ার্ম আপ করার পরে যদি দেখেন আপনি হালকা ঘামছেন, তার মানে আপনি এখন ব্যায়াম করার জন্যে,ক্যালরি বার্ন করার জন্যে তৈরী| কিন্তু আপনি ওয়ার্ম আপ কারার ফলে যদি মনে করেন ক্লান্ত লাগছে, তবে সেটা সঠিক ওয়ার্ম আপ হবে না|
  • দ্রুত ওয়ার্ম আপ করার জন্যে অতিরিক্ত কিছু কাপড় পড়া যেতে পারে, যেমন- হাফ হাতা টি শার্ট এর ওপর একটি ফুল হাতা টি শার্ট|এতে আপনার শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে ওয়ার্ম আপ করতে সাহায্য করবে|

কিছু ওয়ার্ম আপ ব্যায়ামের উদাহরণ :

  • একটি ওয়ার্ম আপ করার উপায় হতে পারে-৩ মিনিট ধীরে/মধ্যম স্পিডে হাঁটা, তারপর ২ মিনিট দ্রুত হাঁটা,তারপর ৫ মিনিট আস্তে জগিং করা|
  • এরোবিকস ব্যায়ামের জন্যে প্রথমে মার্চ করে, সুরের ছন্দে শরীর টিকে নাড়িয়ে ওয়ার্ম আপ করতে হবে, তারপর কিছু dynamic স্ট্রেচিং করা যেতে পারে|অথবা ধীরে কিছু এরোবিকস ব্যায়াম করা যেতে পারে|
  • সাতার কাটার ক্ষেত্রে শুরুতে ধীরে ধীরে সাতার কেটে ওয়ার্ম আপ করে,তারপর যার যার ফিটনেস ও ক্ষমতা অনুযায়ী স্পিডে সাতার কাঁটতে হবে|
  • দ্রুত হাঁটার জন্যে প্রথমে ৫ মিনিট ধীরে হেটে, তারপর ৫ মিনিট মধ্যম স্পিডে হেঁটে ওয়ার্ম আপ করা যেতে পারে|
  • দৌড়ানোর জন্যে, ৫-১০ মিনিট মধ্যম থেকে দ্রুত হাঁটা যেতে পারে, অথবা ৫ মিনিট হেঁটে, তারপর ৫ মিনিট জগিং করা যেতে পারে|
  • স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং/ ওয়েট লিফটিং ব্যায়ামের জন্যে,৫-১০ মিনিট যে কোনো ধীর গতির কার্ডিও, dynamic স্ট্রেচিং ইত্যাদি করা যেতে পারে|তারপর যে মাসেলের জন্যে ওয়েট লিফটিং ব্যায়াম করা হবে, সে মাসেলের স্ট্রেচিং করতে হবে|

এইভাবে শারীরিক পরিশ্রম করে ওয়ার্ম আপ করা ছাড়াও, শারীরিক পরিশ্রম না করেও ওয়ার্ম আপ করা যায়, যেমন: অতিরিক্ত কাপড় পরে, sauna নিয়ে, গরম পানিতে গোসল করে, শরীর মেসেজ করে ইত্যাদি|শীতকালে যেহেতু শরীর গরম হতে সময় লাগে, তাই ভালো মতো শরীর গরম হয়ে ঘাম বের হলে তারপর, শরীরচর্চা করলেই, ভালো ফল পাওয়া যাবে|

মনে রাখবেন, static স্ট্রেচিং ওয়ার্ম আপ এর অংশ নয়|static স্ট্রেচিং করা যাবে শরীর ভালো মতো ওয়ার্ম আপ করে, যখন ঘাম হয়ে,শরীরের তাপমাত্রা ও রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, তখন|

সুতরাং, প্রিয় পাঠক, ওয়ার্ম আপ করা শরীরচর্চার জন্যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝতেই পারছেন| ব্যায়াম শুরুর আগে কিভাবে ওয়ার্ম আপ করবেন, তা ভালো মতো জানুন, বুঝুন, আপনার ট্রেইনার কে জিজ্ঞাসা করুন, তারপর সেইভাবে ব্যায়াম করুন|আর মনে রাখবেন, প্রতিটি ব্যায়ামের ওয়ার্ম আপ কিন্তু ভিন্ন রকম হতে পারে|

এই পোস্টটি কেমন লাগলো তা জানাবেন, ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করুন ও পোস্টটির রেটিং দিন|

ব্যায়ামের কিছু সাধারণ নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন|

হাঁটার নিয়ম জানতে ক্লিক করুন|

ফিটনেস বাংলাদেশের ফেইসবুক লাইক পেইজে লাইক দিন|

ফিটনেস বাংলাদেশের লেখা ভালো লাগলে,  ইমেইলে নিয়মিত নতুন পোস্ট পেতে উপরে ডান দিকে আপনার ইমেল ঠিকানাটি  লিখে subscribe করুন|

নিচের ভিডিও টি দেখুন ও জানুন কিভাবে ব্যায়াম শুরুর আগে ওয়ার্ম আপ করতে পারেন|

Image credit:     universitychic.com 

4 responses to “ব্যায়াম শুরুর আগে কিভাবে ওয়ার্ম আপ করবেন?

  1. আমি ভোরে(সূর্য ওঠার ১০ মিনিট পরে ঘর হতে বের হই) । আর ঘুম থেকে উঠে ২টি প্লেন টোস্ট ও একটি কলা খাই তার পরে ওয়ার্ম আপ করি। ওয়ার্ম আপ করার কতক্ষণ আগে হাল্কা নাস্তা করা উচিৎ ?

  2. অনেক ভালো তথ্য পেলাম। যেমনঃ অতিরিক্ত কাপড় পরা। হাটার আগে আমি বাসাতে ৫ মিনিট রুমে হাল্কা হাটি তার পরে নীচের স্ট্রেচিং করি http://www.youtube.com/watch?v=LmBp05_DMrQ. আবারো ধন্যবাদ এতো কষ্ট করে লেখার জন্য।

    • আপনাকেও ধন্যবাদ|ফিটনেস বাংলাদেশ পড়ুন ও সবাইকে পড়তে বলুন|দোয়া করবেন যেনো আরো ভালো ভালো পোস্ট দিতে পারি|ভালো থাকবেন|

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s