প্রিয় পাঠক, প্রথমেই ফিটনেস বাংলাদেশের সকল নারী পাঠকদের জানাই বিশ্ব নারী দিবসের শুভেচ্ছা|
এর আগে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম–ফিটনেস বাংলাদেশের একজন নিয়মিত পাঠক: সাইদ আদনান কি ভাবে স্বাস্থ্য সম্মত জীবন যাপন করেন?
একজন নারী পাঠক ফিটনেস বাংলাদেশের আহবানে সাড়া দিয়ে কিভাবে স্বাস্থ্য সম্মত জীবন যাপন করেন, তা বলেছেন|
শুনুন তার কাছ থেকে তিনি কিভাবে স্বাস্থ্য সম্মত জীবন যাপন করেন, কি ভাবে ব্যায়াম করেন, কি ভাবে খাওয়া দাওয়া করেন ইত্যাদি|
“সালাম|আমি ইশরাত জাহান, বয়স:২৪|আমি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক এডমিনিস্ট্রেসন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী|সাধারনত: দেখেছি আমার ওজন সহজেই বেড়ে যায়, তাই আমি সব সময় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করি| সে জন্যে আমি নিয়মিত ব্যায়াম, হেলদি জীবনযাপন, ও ব্যালান্স ডায়েটের কোনো বিকল্প খুঁজে পাই না|
আমার লাইফস্টাইল ও ডায়েট :
আমি সাধারনত অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠি|ঘুম থেকে উঠে, প্রথমেই আমি লেবু মধু পানীয় বা লেবু চা খাই| সকালের নাস্তা আমি খুব ভালো মতো করি| কারণ সকালের নাস্তা ঠিক মতো করলে, সারাদিন অনেক কর্মচঞ্চল থাকা যায় ও প্রতিটি কাজে অনেক শক্তি পাওয়া যায়|পড়াশুনাতেও অনেক ভালো মতো মন বসে|নাস্তায় সাধারণত আমি দুটো রুটি,ডিমের সাদা অংশ, সবজি ইত্যাদি খেতে পছন্দ করি|
তারপর বেলা ১০/১১ টার দিকেও কিছু খাই| কারণ সারাদিনে বারে বারে খাবার খাওয়া অনেক জরুরি|এতে মেটাবলিসম ঠিক থাকে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে ও কমে, শরীরে শক্তি পাওয়া যায় ও মন মেজাজ ঠিক থাকে||তাই এই সময়ে ক্ষুধা নিবারণ করতে আমি হেলদি খাবার বেছে নেই| সেগুলো হতে পারে-ফল, টক দই, পনির, বাদাম ইত্যাদি| কিন্তু কোনো ভাবেই ফাস্ট ফুড বা junk ফুড নয়|
বিকালেও আমি হালকা চা, বিস্কিট, ফল ইত্যাদি খাই| তাতে রাতের খাবারে চাপ পড়ে না|ফলে রাতে কম খাওয়া হয়|কারণ ঘুমানোর তিন ঘন্টা আগে রাতের খাবার তো খেতে হবেই, রাতে কমও খাওয়া উচিত| রাতে আমি সাধারণত রুটি ও সবজি খাই|আর রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চেষ্টা করি|তাতে শরীর ও মন মেজাজ ভালো থাকে|
আর ঘুমানোর আগে এক গ্লাস ননীবিহীন দুধ খাই| কারণ দুধে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন, যা প্রতিটি মহিলার জন্য খুবই দরকারী|এতে হাঁড় শক্ত থাকে ও হাঁড় এর ক্ষয় রোগ হয় না|
এর বাইরেও আমি দিনে কয়েকবার সবুজ চা খাই| কারণ এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুবই কার্যকরী|আর আমি তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলি|খেলেও এর তেল ফেলে দিয়ে, বা টিসু দিয়ে তেল বের করে খাই|যদি কোনো গুরুপাক খাবার খাই, তবে তার সাথে অনেক লেবু খাই, বা গরম পানিতে লেবু চিপে খাই| কারণ এই ভাবে গুরুপাক খাবারের সাথে লেবু খেলে হজম হয়ে যায়|আর গুরুপাক খাবারের সাথে তো বটেই, প্রতিদিনই খাবারের সাথে আমি সালাদ খেতে পছন্দ করি| প্রতিদিন প্রচুর কাঁচা, সবুজ শাক সবজি ও ফল মূল থাকে আমার খাবারের মেনুতে| প্রচুর পানি পান করা আমার প্রতিদিনের অভ্যাস|
তাছাড়া আমি আরো যেটা মেনে চলি তা হলো portion size control| অর্থাৎ, প্রতিটি খাবারই খাই পরিমানমতো বা মেপে মেপে|
এই ভাবে আমি হেলদি লাইফস্টাইল ও নিয়ন্ত্রিত ব্যালান্সড ডায়েট মেনে চলি|
আমার ব্যায়াম:
আমি ব্যায়ামের ব্যাপারে খুবই সচেতন| ব্যায়াম করতে আমার খুবই ভালো লাগে|আমি নিয়মিত জিমে গিয়ে ব্যয়াম করি| এবং ট্রেইনারদের পরামর্শ মতো ব্যায়াম করি|
আমি ব্যায়ামের ব্যাপারে খুবই নিয়ম মেনে চলি| সম্ভব হলে দিনে দুবার ব্যায়াম করি| সকালে যোগ ব্যায়াম, বিকেলে কার্ডিও, টোনিং, ফ্রি হ্যান্ড, স্ট্রেন্থ ইত্যাদি|
আমার ব্যায়ামের রুটিনে সাধারণত: কার্ডিও,যেমন: ট্রেড মিল, এরোবিকস,ইত্যাদি থাকে|তাছাড়া আমি পেটের ব্যায়াম, যোগ ব্যায়াম, অন্যান্য ফ্রি হ্যান্ড, স্ট্রেচিং ব্যায়াম করি|আর ওয়েট লিফটিংও করি| তবে ওয়েট লিফটিং করি সপ্তাহে বেশি হলে ৩ দিন|কারণ এই ব্যায়াম রোজ রোজ করার দরকার নেই|এটি সপ্তাহে একদিন পর পর করলেই ভালো|আর মহিলাদের জন্য ওয়েট লিফটিং করা অনেক ভালো, কারণ এতে হাঁড় শক্ত হয়, বডি শেপ হয়, মাসেলের শক্তি ও flexibility বাড়ে, মেটাবলিসমও বাড়ে| আমার ব্যায়ামের রুটিনে সাধারণত এক একদিন এক এক বডি পার্টের ব্যায়াম থাকে, যেমন: biceps, triceps, abdomen, leg ইত্যাদি| তাই ব্যায়ামটা খুব সহজ হয়ে যায় ও ঠিক মতো মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি বডি পার্টের ব্যায়াম করা যায়|
প্রতিদিন আমার পক্ষে জিমে যাওয়া সম্ভব হয়না| কারণ আমার ক্লাস থাকে, অন্যান্য কাজও থাকে|যদিও আমি চেষ্টা করি সপ্তাহে ৪-৫ দিন ব্যায়াম করতে, তাই যেদিন জিমে যেতে পারি না, সেদিন বাসাতেই ব্যায়াম করার চেষ্টা করি|
আর আমি সব সময় ফিটনেসের ব্যাপারে অনেক সচেতন| এই ক্ষেত্রে, নতুন নতুন বিষয় জানতে আমার খুবই ভালো লাগে| তাই একদিন নেটে খুজতে খুজতে পেয়ে গেলাম ফিটনেস বাংলাদেশ ব্লগ| সেখানে পেলাম ফিটনেস সম্পর্কে অনেক তথ্য| বিশেষ করে বাঙালিদের ব্যাপারে| এই ব্লগ থেকে আমি ডায়েট/ ডায়েট টিপস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি|সঠিক উপায়ে কি ভাবে ডায়েট করা উচিত, ব্যালান্স ডায়েট কি, portion size control কি, হেলদি খাবার, সঠিক পরিমানে সবজি ও আমিষ কিভাবে প্রতিদিন খেতে হবে, কোন খাদ্যে কত ক্যালরি , খাদ্যের ক্যালরি মেপে খাওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে|সঠিক উপায়ে ব্যায়াম কি ভাবে করা দরকার, হাঁটার নিয়ম তাও জেনেছি|এগুলো আমার ফিটনেসের লক্ষ্য অর্জনে অনেক সাহায্য করে যাচ্ছে|
আমার শারীরিক পরিবর্তন
নিয়মিত ব্যায়াম, হেলদি জীবনযাপন, ও ব্যালান্স ডায়েটে মেনে চলার ফলে আমি শুধু স্লিম ও সুন্দর স্বাস্থ্যই পাইনি, অর্জন করেছি ফিটনেস| শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস| পড়ালেখায় ও ব্রেইনের কাজেও অগ্রগতি হয়েছে| যেকনো কিছুই আমি সহজ ভাবে গ্রহণ করতে পারি, শরীরে কোনো দুর্বলতা নেই আল্লাহর রহমতে, যেকোনো পোশাকই আমি স্বাচ্ছন্দে পরতে পারি ও আমাকে মানিয়ে যায়|আশা করি আমি এই ফিটনেস সারাজীবন মেইনটেইন করব এবং সারা জীবন সুস্থ্য ও সুন্দর থাকব|
নারীরা কেন নিয়মিত ব্যায়াম কেন করবেন?
ব্যায়াম সবার জন্যই খুবই দরকার|ব্যায়ামের অনেক উপকারিতা আছে|যারা ওজন কমাতে, ফিট থাকতে, ওজন বাড়াতে ও বডি শেপ করতে চান, তাদের জন্যে অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত|
আর মহিলাদের জন্যে তো ব্যায়ামের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না|ওজন নিয়ন্ত্রণ,ওজন কমানো, বডি শেপ করা ছাড়াও বিভিন্ন অসুখ, যেমন: প্রেসার,ডায়বেটিস, হাঁড় এর রোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় ব্যায়াম| মহিলাদের মেয়েলি অসুখ দূর করতে ও প্রতিরোধ করতে ব্যায়াম দরকারী| তাছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করলে প্রসবের সময় কষ্ট কম হয়|শরীরে অনেক শক্তিও পাওয়া যায় নিয়মিত ব্যায়ামে|আর মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়, মন ভালোও থাকে|
তাই একজন নারী হিসাবে আমি মনে করি একজন নারী কালো না ফর্সা, সেটা বড় নয়| নারিরা পার্লারে যেয়ে রূপচর্চা করে সুন্দর হতে চান|কিন্তু তার চাইতেও বড় কিন্তু নিয়মিত ব্যায়াম করা| যদি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়/ স্লিম থাকা যায়, তবে তাকে সুন্দর তো দেখাবেই, সব পোশাকেই ভালো লাগবে|তাই আমি মনে করি, প্রতিটি নারিরই সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত|বিশেষ করে ২৫ বছর বয়সের পরে তো ব্যায়াম করা অত্যাবশ্যক|
ধন্যবাদ| সবাই ভালো থাকবেন| আর আমার জন্য দোয়া করবেন|”
লেখিকা পরিচিতি:
নাম: ইশরাত জাহান|
পেশা: ছাত্রী, মাস্টার্স, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেসন, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি, ঢাকা|
প্রিয় পাঠক,ব্যায়াম হতে পারে নারীদের জন্যে একটি আনন্দের উপকরণ ও অবসরের সাথী|আমি মনে করি প্রতিদিনের কাজের তালিকায় ১- ১.৫ ঘন্টা ব্যায়াম রাখা খুব একটা কষ্টদায়ক নয়|
যে সব নারিরা এখনো ব্যায়াম শুরু করেননি, তারা আর দেরি না করে একটু হলেও ব্যায়াম করা শুরু করুন| নিয়মিত ব্যায়াম, হেলদি জীবন যাপন, ও ব্যালান্স ডায়েট চার্ট মেনে চললে, সবার পক্ষেই ফিটনেস অর্জন করা সম্ভব|
বাংলাদেশের সকল নারীদের প্রতি আমার অনুরোধ সংসার, চাকরি, পড়াশুনার পাশাপাশি একটু নিজের দিকে যত্নবান হোন|নিজের জন্য সময় বের করুন| নিয়মিত ব্যায়াম করুন, ব্যালান্স ডায়েট ও হেলদি জীবন যাপন করুন, নিয়মিত মেডিকেল চেকাপ করুন| নিয়মিত ওজন মাপুন, দেখুন আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা| তাহলেই আপনার সংসার, সন্তান ঠিক থাকবে, আর দেশও ঠিকভাবে এগিয়ে যাবে| আপনি ফিট থাকলেই কিন্তু সব ঠিক থাকবে|
এই পোস্টটি কেমন লাগলো তা জানাবেন, ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করুন ও পোস্টটির রেটিং দিন|
ফিটনেস বাংলাদেশের ফেইসবুক লাইক পেইজে লাইক দিন|
ফিটনেস বাংলাদেশের লেখা ভালো লাগলে, ইমেইলে নিয়মিত নতুন পোস্ট পেতে উপরে ডান দিকে আপনার ইমেল ঠিকানাটি লিখে subscribe করুন|
admirable
hight barabar kichu bym din do…
ok.Thanks