প্রিয় পাঠক, সালাম ও শুভেচ্ছা| কেমন আছেন সবাই? আজকে কি কি হেলদি খাবার খেয়েছেন? বা কি হেলদি খাবার খাওয়ার কথা চিন্তা করছেন? নতুন কোনো রেসিপি চেষ্টা করার কথা ভাবছেন? হেলদি উপায়ে জীবন যাপন করার জন্যে ও ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিন্তু আপনাকে অবশ্যই হেলদি উপায়ে খাবার রাঁধতে হবে|মানে, বেশি তেল ও মশলা যুক্ত খাবার, ভাজা বা ভুনা খাবার, অধিক ক্যালরি ও ফ্যাট যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে|
আমি কিন্তু সব সময় বিভিন্ন জায়গায় খুজি আর কি নতুন হেলদি রেসিপি চেষ্টা করা যায়|
তাই আপনাদের জন্য আমার রেসিপির ভান্ডার থেকে একটি রেসিপি শেয়ার করছি| আমি নিশ্চিত এটি আপানাদের ভালো লাগবে| কারণ, গতানুগতিক রান্না খেয়ে আমাদের রুচি অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়| তাই এই পালংশাকের একটু অন্যরকম রেসিপি আপনাদের জন্য দিচ্ছি|
তার আগে একটু পালংশাকের গুনাগুন বলে নেই|
পালংশাকে যে যে পুষ্টি উপাদান গুলো আছে :
পালংশাক কম ক্যালরি ও অধিক ভিটামিনযুক্ত একটি গাঢ়সবুজ শাক|
পুষ্টিবিদেরা সবসময় বলেন যে, আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অবশ্যই একবেলা হলেও গাঢ়সবুজ শাক বা পাতা জাতীয় খাবার থাকতেই হবে| কারণ, এই ধরনের দরকারী শাকে থাকে অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি, antioxidants এবং anti-cancer উপাদান|
পালংশাক এই ধরনের দরকারী গাঢ়সবুজ শাক, যাতে আছে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল| পালং শাকের ভিটামিনে আছে folate, niacin, vitamin A, B6, C, Niacin, Thiamin, Riboflavin, , bioflavonoids, vitamin K, E (Alpha Tocopherol)| এতে মিনারেলস আছে–potassium, manganese, zinc, copper, magnesium, iron, calcium, phosphorus, , sodium, ও iodine.
এতে অধিক মাত্রায় omega-3 fatty acidsও আছে, যা হার্ট, ত্বক, ব্রেইন ইত্যাদির জন্য খুবই ভালো| এতে আমিষও আছে| আর আছে অনেক দরকারী amino acids|
এছাড়াও এর রোগ প্রতিরোধী antioxidant ও phytochemicals এর তালিকায় আছে – carotenoids/ beta-carotene, lutein, lipoic acid, xanthenes |
কাঁচা পালংশাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ও ক্লোরফিল থাকে, যা শক্তিশালী antioxidant ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে|
এতে ফ্যাট/ স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও Cholesterol নেই, আর আছে প্রচুর ফাইবার|
পালংশাক আমাদের শরীরের জন্য কেন ভালো?
- এটি চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়, চোখের নানা রকম রোগ সারাতে সাহায্য করে|
- ব্লাড প্রেসার কমায়/ নিয়ন্ত্রণে রাখে, শরীরের রক্ত চলাচল ঠিক রাখে, হাইপার টেনশন কমায় , ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে ও প্রতিরোধ করে
- মাসেলের শক্তি বৃদ্ধি করে, বিশেষ করে হার্টের মাসেলের, এতে হার্টের বিভিন্ন অসুখ হতে রক্ষা পাওয়া যায়
- এর antioxidant এর কারণে চোখের ছানি পড়ে না ও বয়সের কারণে দৃষ্টি শক্তি কমা হতে রক্ষা করে
- এর আমিষ–ফ্যাট ও Cholesterol দূর করে, ফলে হার্ট এটাকের, স্ট্রোকের ঝুকি কম হয় | এর পটাশিয়াম হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে|
- এটি নিয়মিত খেলে আলঝেইমার রোগ হয় না, কারণ এটি শরীরের নার্ভ ঠিক রাখে | বয়সের কারণে স্মৃতিশক্তি কমা হতে রক্ষা করে ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে| তাছাড়া হেলদি নার্ভাস সিস্টেম ও হেলদি ব্রেইনও পাওয়া যায় নিয়মিত পালংশাক খেলে|
- এতে অনেক ক্যালসিয়াম থাকায় এটি হাঁড় শক্ত রাখতে ও হাঁড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে হাঁড়ের বিভিন্ন রোগ, যেমন: Osteoporosis, Arthritis ইত্যাদি হয় না
- এর ভিটামিন এ ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ও বলি রেখা পড়তে দেয় না
- তাছাড়া এতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকায় এটি ইনফেকশন সারাতে ও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
- গ্যাস্টিক ও আলসার হতে বাঁধা দেয়
- এতে প্রচুর আয়রন থাকায় এটি রক্ত বৃদ্ধি করে, লাল লোহিতকনিকা বৃদ্ধি করে, রক্তে অক্সিজেন বাড়ায় ও রক্তশূন্যতা দূর করে
- এতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় ভিটামিন সির অভাব জনিত রোগ দূর করে
- বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার, যেমন: bladder, prostate, liver ,colon, stomach, skin, breast, ovarian এবং lung cancer প্রতিরোধ করে ও ক্যান্সারের কোষ ধ্বংশ করে ও ক্যান্সারের কোষ সৃষ্টি হতে বাধা দেয়|
- এটি শরীরের রোগ প্রতরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরের সব অঙ্গ ও প্রক্রিয়া, যেমন: শ্বাস, হজম, ইত্যাদি প্রক্রিয়া ঠিক রাখে
- ক্ষতিকর সুর্য রশ্মি, যেমন ইউভি রশ্মি হতে ত্বককে রক্ষা করে, ফলে ত্বকের ক্যান্সার হয় না
- এতে protein, vitamins, minerals ও phytonutrients থাকায় শিশুদের বেড়ে ওঠায় অনেক ভূমিকা রাখে
- Insomnia বা ঘুমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে
- শরীরের যে কোনো জায়গায় tumor হয় না, বা সারাতে সাহায্য করে
- এর ফাইবার বা আঁশ সারাদিনের ২০% ফাইবারের চাহিদা পূরণ করে, এই ফাইবার বা আঁশ, হজমে সাহায্য করে ও ফ্যাট দূর করে ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, শরীরের ক্ষুধা নিবারণ করে, ক্ষুধা কম লাগে, ফলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ও হজম প্রক্রিয়া সচল রাখে|
- এর মিনারেলস খুবই ক্ষারীয়, যা শরীরের pH এর সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে|
- এটি হতে পারে মাংশের বিকল্প আমিষ|কারণ, সমপরিমান পালংশাক থেকে মাংসের মতই একই পরিমানে আমিষ পাওয়া যায়
- গর্ভবতী মহিলারা এটি খেলে গর্ভকালীন নানান রকম সমস্যা হতেও রক্ষা পাওয়া যায়
শরীর সুস্থ্য রাখতে, ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই পালংশাকের জুড়ি নেই | তাই একে বলা হয় “ nutritional powerhouse”| তাই, বুঝতেই পারছেন, আমাদের শরীরের জন্য পালংশাকের অনেক উপকারিতা আছে|এর প্রচুর ও নানান রকম ভিটামিন, মিনারেলস, ইত্যাদির জন্য এটি একটি হেলদি খাবার হিসাবে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় সবার উপরে রাখা উচিত|
তাই নিয়মিত পালংশাক ও অন্যান্য সবুজ শাকপাতা খেতে হবে|
মাশরুমও কম ক্যালরি ও অধিক ফাইবার যুক্ত, একটি সবজি, যাতে কোনো ফ্যাট নেই | এতে অনেক ভিটামিন ও মিনারেল আছে | ভিটামিন C, D, B6 ও B12, এবং অনেক পরিমানে riboflavin, niacin , selenium , calcium, iron, potassium , selenium ও pantothenic acid আছে| এতে খুব কম শর্করা থাকে, ফলে ডায়বেটিস, কোলেস্টেরল ও হার্টের রোগীরা এটি খেতে পারেন| তাছাড়া এটি ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে
নিচে রেসিপিটি দিচ্ছি:
উপকরণ
পালং শাক – এক গুচ্ছ|
পেয়াজ কুচি—২ টেবিল চামচ
রসুন কুচি – ৩ টি কোষ
গোল মরিচ- ১/২ চা চামচ
সয়াসস—এক টেবিল চামচ
মাশরুম—ক্যানের বাটন মাশরুম — ৪ টি পাতলা করে কাটা
তিল –টোস্ট করা, এক টেবিল চামচ
জলপাই তেল—এক টেবিল চামচ
প্রণালী:
- পালং শাক পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ভালো ভাবে ধুয়ে নিন|তারপর লম্বা ডাটাগুলো ফেলে দিয়ে, পাতাগুলো কুচি করে নিন|
- প্যান গরম করে তাতে তিল দিন| নাড়ুন| তিল ফুটতে শুরু করলে ও হালকা বাদামি রং ধরলে, চুলা থেকে নামান|
- এবার অন্য একটি প্যানে জলপাই তেল গরম করে, তাতে পেয়াজ কুঁচি দিন| ভাজুন |
- এক মিনিট পরে রসুন কুচি দিন| ভাজুন|
- এবার পালংশাক কুচি দিন| ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন| মাঝে মাঝে নাড়ুন|
- পালংশাকের পানি শুকিয়ে গেলে ও শাক নরম হয়ে গেলে, মাশরুম দিন|
- এবার গোলমরিচ ও সয়াসস দিন|লবন দিন|
- নেড়ে চেড়ে লবন চেখে নামান|
এটি ভাত, ফ্রাইড রাইস, এমনকি নুডুলস এর সাথেও পরিবেশন করা যায়|
পালংশাক রান্না করার সময় খুব বেশি রান্না করবেন না, কারণ পালংশাক বেশি রান্না করলে এর ভিটামিন সমূহ নষ্ট হয়ে যায়|
যেহেতু পালংশাক এই শীতের সময়ে সহজলভ্য, তাই এটি অবশ্যই আজকেই রান্না করে দেখবেন|আর আমাকে জানাবেন কেমন লাগলো| আর ভালো লাগলে আপনার পরিচিত সবার সাথে শেয়ার করুন|
এই রান্নায় চাইলে, মাশরুম ও তিল বাদ দিতে পারেন |
আরো দুটি স্বাস্থ্য সম্মত রেসিপি —স্টার ফ্রাইড সবজির রেসিপি এবং টুনা ও ফলের সালাদের রেসিপি জানতে ক্লিক করুন|
Assalamualakum.ami apnar siter ekjon vokto pathok. amar shomoshsha holo ami khuboy chikon. amar age 21. februari 18 te 22 hobe. ojon 52 kg. ami maje maje khub durbolota onu vob kori. oboshadgrosto hoye pori. khabare marattok oruchi. apnar site pore ami etutuku bujesi je bayam korle ami eshob kisu theke mukti pete pari. kintu protiti bayamr lav ojon komano dekhe tao korte parina. ojon baranor jonno beshi kalori jukto khabar khele shopnodosh bere jay. ami ki korbo? pleas amak shahajjo korun. chiro kritoggo thakbo.
Walaikum Salam.Apni amar site er vokto jene khub bhalo laglo. Amar blog niyomito porun. Shamne kichhu ojon baranor tips deya hobe. Apnar je shomoshya bollen tate apni ekjon bhalo Doctor dekhan. Parle ekjon bhalo dietitian er kach theke poramorsho nite paren. Protita beyamer lav ojon komano eta thik noy. Dekhben muscle buildup korao achhe. Exercise korle apni khabare ruchi paben, energy paben,manoshik shomoshyao dur hobe. Apno ekjon bhalo dietitain er kach theke food chart nin.Eta apnar onek upokar hobe.
Thanks,take care.
শাক সব্জির উপকারিতা আগেও জানা ছিল, তারপর আপনার সাবলীল ও চমৎকার লেখায় আরো ভাল লাগলো।
সামনে আরো ভাল কিছুর আশায় রইলাম।
মাছের তেল, কোয়েল পাখির ডিম, মাশরুম এরুপ Healthy খাবার গুলি নিয়ে Tips দিলে খুশী হব।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, ভালো লাগলে আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন|দোয়া করবেন সামনে যেন আরো অনেক ভালো ভালো বিষয়ের উপর পোস্ট দিতে পারি|